দুইবার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ করে এবার আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে সরাসরি জাহাজ ভিড়েছে বহুল প্রতীক্ষিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি)।
গতকাল দুপুর সোয়া ১টার দিকে ১ হাজার ৭১২ টিইইউস আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের পিসিটি-১ জেটিতে এসে সরাসরি ভিড়েছে। জাহাজটি মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং থেকে ওই আমদানি পণ্য নিয়ে গত ২৬ এপ্রিল পিসিটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এর মাধ্যমে পুরোদমে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিং শুরু হলো পিসিটিতে।
এর আগে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম আমদানি কনটেইনার খালাস করা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে মায়ের্স্ক ভলাদিভস্টক জাহাজ থেকে ১৬ টিইইউস কনটেইনার খালাস করা হয় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে। এরপর ৯ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে মায়ের্স্ক জিয়ানমেন জাহাজ থেকে ২০৮ টিইইউস আমদানি কনটেইনার খালাস করা হয়। পরীক্ষামূলক ওই দুই যাত্রায় জাহাজ দুটি প্রথমে বন্দরের অন্যান্য টার্মিনালে ভিড়ে। সেখানে পণ্য খালাস করে পিসিটিতে এসে কিছু পণ্য খালাস করে। এছাড়া ওই সময় জাহাজ ও পণ্যের ডিক্লেয়ারেশনও পিসিটি ছিল না। কিন্তু এবার সরাসরি পিসিটির জেটি ঘোষণা দিয়ে জাহাজ এসেছে এবং আমদানিকারকরাও তাদের পণ্য খালাস পয়েন্ট পিসিটি ঘোষণা দিয়েছে।
এর মাধ্যমের চট্টগ্রাম বন্দরের প্রথম বিদেশি অপারেটর পরিচালিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) পুরোদমে তার আমদানি ও রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার হ্যান্ডলিং শুরু করলো। এছাড়া আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার স্ক্যানিংয়ে টার্মিনাল অপারেটরের ব্যবস্থাপনায় ইতোমধ্যে কনটেইনার স্ক্যানার বাসানোর কাজ শেষে হয়েছে। কাস্টমসের সহকারী কমিশনার, রাজস্ব কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনবল পদায়ন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পিসিটিতে রপ্তানি ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং শুরু হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট কমে আসবে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের জুনে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য আরএসজিটির সাথে ২২ বছরের চুক্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০২৪ সালের ১০ জুন পতেঙ্গা কনটেইনার টর্মিনালে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজে রপ্তানি কনটেইনার শিপমেন্ট হয়। আরএসজিটির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১৮ ডলার পায় বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে গত ফেব্রæয়ারি ও মার্চে দুটি পরীক্ষমূলক আমদানি পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়ানো হয়েছিল। তবে সেগুলো পিসিটি ঘোষণায় আসেনি। এবার মায়ের্কস চট্টগ্রাম জাহাজটি সরাসরি পিসিটির জেটি ঘোষণা দিয়ে এসেছে। এছাড়া ওই জাহাজের সব আমদানি পণ্যও পিসিটি ঘোষণায় এসেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র এবং ডেপুটি কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, আমদানি পণ্যের শুল্কায়নসহ আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস প্রয়োজনীয় জনবল পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে পদায়ন করেছে।
এদিকে, গত বছরের ১৭ এপ্রিল পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের ৩২ একর জায়গাকে ওয়্যারহাউজিং স্টেশন হিসাবে ঘোষণা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর পাশাপাশি লাইসেন্সসহ বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ ছাড়পত্রসহ ২৫টি দপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়।
এছাড়া, কাস্টম হাউসের সার্ভার এবং বন্দরের পণ্য ডেলিভারি সিস্টেমের সঙ্গেও অনলাইন সংযোগ স্থাপন করতে হয়। অর্থাৎ, বন্দর ও কাস্টম হাউসের সিস্টেমের সঙ্গে টার্মিনাল অপারেশনের আন্তঃসংযোগ করতে হয়।
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) তিনটি কনটেইনার জেটি এবং একটি ডলফিন অয়েল জেটি রয়েছে। যেখানে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ এবং একটি তেলবাহী ট্যাংকার নোঙর করা যায়। এই টার্মিনালে প্রতিবছর ৪ লাখ ৫০ হাজার টিইইউস কনটেইনার পরিচালনা করা সম্ভব হবে। যা চট্টগ্রাম বন্দরের সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
পূর্বকোণ/ইব