উৎপাদন বাড়াতে ১৫ এপ্রিল থেকে ৫৮ দিনের জন্য বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সবধরনের মৎস আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১১ জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কাজ করলেও অনেকটা নীরব রয়েছে সামুদ্রিক অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অফিস। অথচ এ দপ্তরের অধীনে তদারকির দায়িত্ব রয়েছে দেশের উপকূলীয় ১৪ জেলার ৬৮টি উপজেলার ৭১০ কিলোমিটার এলাকা। কিš‘ এ সময়ে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর এককভাবে সাগরে কোন অভিযান পরিচালনা করেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারাদেশে সাগর ও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে বছরে মৎস্য উৎপাদন হয় ৪৭ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সাগর থেকে মাছ মেলে ১৫ শতাংশ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে অবশিষ্ট ৮৫ শতাংশ মাছ পাওয়া যায়। অথচ বাংলাদেশে বিশাল সামুদ্রিক জলরাশি রয়েছে। কিš‘ যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাবে সাগর থেকে কাক্সিক্ষত মাছ মিলছে না।
জানতে চাইলে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক মো. আবদুস ছাত্তার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সবধরনের মৎস আহরণের উপর সরকারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর এককভাবে কোন অভিযান পরিচালনা করেনি। তবে সামষ্টিকভাবে কিছু কাজ করেছে। তাছাড়া ফিশিং ট্রলার মালিকদের সাথে সচেতনতামূলক সভা ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে, সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের নীরবতার বিপরীতে সক্রিয় ভূমিকা দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের। এ অফিস গত ১৪ দিনে চট্টগ্রামে এককভাবে সাগরে শতাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে। একইসাথে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছে ১৪৩ বার, মাছঘাট ২৮৬ বার এবং আড়ত পরিদর্শন করেছে ২৪৮ বার।
এ সময়ে একবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে একটি মামলাও দায়ের করা হয়; জব্দ করা হয় ৯২৫ কেজি মাছ এবং দুই লাখ ৬৪ হাজার মিটার জাল। জব্দ জাল ও মাছের মূল্য প্রায় ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জব্দ মাছ নিলাম করে আয় করা হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের উপকূলীয় ১৪ জেলা, ৬৮ উপজেলা ও চট্টগ্রাম মহানগরে সাগর উপকূলীয় এলাকায় মৎস্য আহরণে ৫৮ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা চলছে। একইসময়ে চট্টগ্রামের ৫ উপকূলীয় উপজেলা সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার পতেঙ্গা, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় মৎস্য আহরণের উপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এ সময়ে চট্টগ্রামের ৪০ হাজারের অধিক সামুদ্রিক জেলে মৎস্য আহরণের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকবে। নিষেধাজ্ঞার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে- সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণ নিশ্চিত করা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে। এর আগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল।
কিš‘ চলতি ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এটি পরিবর্তন করে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের জন্য কার্যকর করে। তবে ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলোকে ২০১১ সাল থেকেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়, যেটি অক্টোবর মাসে কার্যকর হয়ে থাকে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সবধরনের মৎস আহরণের উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফল রূপ দিতে জেলা মৎস্য অফিস প্রতিদিনই কাজ করছে, চলছে একাধিক অভিযানও।
তিনি বলেন, গত ১৪ দিনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে চট্টগ্রামের পাঁচ উপকূলীয় উপজেলা সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার পতেঙ্গা, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় সাগরে শতাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা মৎস্য অফিস। এ অভিযানে বিপুল পরিমাণ জাল ও মাছ জব্দ করা হয়। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।