ধারণক্ষমতার বেশি বর্জ্য ফেলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দুটি ভাগাড়ই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নগরীর হালিশহরের আনন্দ বাজার ও বায়েজিদের আরেফিন নগরে বানানো এ দুই ভাগাড়ে আবর্জনার স্তূপ এত উচুঁ হয়েছে, বর্ষায় সেগুলো ধসে প্রাণহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দ্রুত নতুন ভাগাড় বানানোর বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আনন্দ বাজার ভাগাড় গড়ে উঠেছে নয় একর ভূমির উপর। এতে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২-২৩টি ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত বর্জ্য ফেলা হয়। অন্যদিকে, ১১ একর ভ‚মির উপর গড়ে তোলা আরেফিন নগরের ভাগাড়ে ১৮-১৯টি ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত বর্জ্য ফেলা হয়। প্রায় ৭০-৮০ লাখ মানুষের বর্জ্যরে জন্য মাত্র দুটি ভাগাড় থাকায় দ্রুতই সেগুলো পূর্ণ হয়ে যায়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার ১০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। বর্জ্যগুলো সংগ্রহ করে এসটিএস ও খোলা স্থানে আনা হয়। এরপর চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা আনন্দ বাজার ও আরেফিন নগরের ভাগাড়ে নিয়ে যান। কিন্তু এসব বর্জ্য যথাযথ ব্যবস্থাপনায় নিঃশেষ না করায় ভাগাড় দুটির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করেছে বলে জানা গেছে।
মূলত পর্যাপ্ত গাড়ি ও যন্ত্রপাতির অভাবেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কারণ ২০১৮ সালের পর থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য মাত্র ১০টি যানবাহন ও যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে। বিপরীতে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ৬৮টি গাড়ি ও যন্ত্রপাতি নিলাম দিয়েছে চসিক। আরও ৭০টি যন্ত্রপাতি ও গাড়ি নিলাম দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এছাড়া বাকি যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে তার ৬০ ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার আই ইউ এ চৌধুরী বলেন, নগরীর দুটি ডাম্পিং স্টেশনেই (ল্যান্ডফিল) ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত আবর্জনা রয়েছে। এরপরও আমরা প্রতিদিন সেখানে আবর্জনা ফেলছি। কিন্তু এই দুটি ল্যান্ডফিলকে ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য যেসব আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তা আমাদের নেই। সেখানে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে তা অনেক পুরনো এবং অকার্যকর।
তিনি আরও বলেন, এখন যে অবস্থা হয়েছে, ওই দুই এলাকায় ময়লার পাহাড় ধসে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ ময়লার পাহাড় এত উঁচু হয়েছে, আমাদের যন্ত্র আর তোলা যাচ্ছে না। এভাবে কিছুদিন চলতে থাকলে যেকোন সময় ধস হতে পারে। বর্ষায় এই শঙ্কা আরও বাড়বে।
এ অবস্থায় নতুন যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ ও নতুন ভাগাড় বানাতে নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের নন্দীর হাটে ৪০ একরের একটি জমি প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, নন্দীর হাটের দিকে প্রায় ৪০ একরের মতো একটি জায়গা পেয়েছি। আপাতত সেটিকে ভাগাড় করার চিন্তাভাবনা করছি। সেখানে বসতিও কম রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চসিকের জন্য নতুন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি কিনতে মন্ত্রণালয় থেকে আমরা ৩৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি। প্রস্তাবটি এখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। মেশিনারিগুলো পেলে আবর্জনা অপসারণ ছাড়াও খাল খনন ও পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করতে পারবো। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও গতি আসবে।
জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় ময়লা পরিবহনের জন্য কম্পেক্টর ব্যবহার করা হয়। চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডের জন্য ৪১টি কম্পেক্টর প্রয়োজন। একটি কম্পেক্টর তিনটি ট্রাকের সমান ময়লা বহন করতে পারে। কিন্ত চসিকের ২০টি কম্পেক্টর রয়েছে। আরও ২১টি কম্পেক্টর প্রয়োজন। এছাড়া কন্টেইনার মোবাইল ১০টি। মিনি পে লোডার ছয়টি, চেইন ডোজার, স্কেভেরসহ মোট ৩৯৮ কোটি টাকার মেশিনারির জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে চসিক। যা বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
পূর্বকোণ/ইব