চট্টগ্রাম বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

বৈশাখী মেলায় শত কোটি টাকা ব্যবসার আশা
চট্টগ্রামে বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি তৈজসপত্র কিনছে শৌখিন ক্রেতারা

বৈশাখী মেলায় শত কোটি টাকা ব্যবসার আশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ এপ্রিল, ২০২৫ | ১২:১৮ অপরাহ্ণ

১১৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে বছর ঘুরে আবার বসেছে বৈশাখী মেলা। নগরীর লালদিঘির আশপাশের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসা এই মেলায় গৃহস্থালী পণ্য কিনতে ভিড় দেখা গেল লাখো মানুষের। ঝাড়ু, হাত পাখা, শীতল পাটি, দা, খুন্তি, বেতের পণ্য, কাঠের আসবাব, শোপিসের জন্য বলী খেলার মেলা বিখ্যাত হলেও এবার ক্রেতাদের বাড়তি আগ্রহ দেখা গেছে আধুনিক ডিজাইনে তৈরি মাটির নানা তৈজসপত্রেও।

 

মাটির কলস, বাটি, গ্লাস, কাপ, প্লেট, হাঁড়ি-পাতিল থেকে বয়াম, কলমদানি, ফুলদানি, শৌখিন টবের পাশাপাশি ডিনার সেট, খেলনা সেট কিনতে শুক্রবার বিকালে মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় করেন শৌখিন ক্রেতারা। এছাড়া ঘর সাজাতে মাটির পাতে আঁকা গাছ, পাতা, ফুল, নৌকা, দৃশ্য, কোরআনের আয়াত, স্বাগত শ্লোকও কিনেন কেউ কেউ। তবে এসব পণ্যের দাম এবার কিছুটা বেশি বলেই অভিযোগ করেছেন একাধিক ক্রেতা।

 

শুক্রবার বিকালে মেলায় এসে নাচের শিক্ষক ফাহমিদা আক্তার মাটির তৈরি একটি ডিনার সেট কিনতে দরদাম করছিলেন। তিনি পূর্বকোণকে জানান, ৩৩ সেটের একটি ডিনার সেট সাড়ে ৪ হাজার টাকা চাইছেন বিক্রেতা। এই দামে তো ভালোমানের সিরামিকের ডিনার সেট পাওয়া যায়। মাটির তৈরি ডিনার সেট কোনোভাবেই দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বিক্রেতা তা মানছেন না। বেশি দাম চাইছেন।

 

তবে বিক্রেতারা জানিয়েছেন- গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম বাহন এই ক্ষুদ্র শিল্প মধ্যস্থতাকারীদের দখলে চলে গেছে। কুমিল্লা, ঢাকা, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, যশোর, পটুয়াখালী, বগুড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মৃৎশিল্পের মালামাল সংগ্রহ করেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। তাদের কাছ থেকে কিনে নেন ঢাকার ধানমন্ডি, হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বরের ব্যবসায়ীরা। তারাই বাজারজাত করেন। আধুনিকতার ছোঁয়া আর মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দাম কিছুটা বেশি।

 

মাটির তৈজসপত্রে আগ্রহ থাকলেও বরাবরের মতো এবারও ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ঝাড়ু ও হাত পাখা। কারণ এই মেলা থেকেই পুরো বছরের জন্য এসব পণ্য কিনে নেন চট্টগ্রাম শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা। ঝাড়ু মানভেদে প্রতি জোড়া ১২০ থেকে ২৫০ টাকা এবং হাত পাখা মানভেদে প্রতি পিস ৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবার। শুধু ঝাড়ু আর হাতপাখাই কোটি টাকার উপরে বিক্রি হওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

বংশপরম্পরায় বাবার হাত ধরে ঝাড়ু বিক্রিতে আসা বাঁশখালীর ইলিয়াস আলী ফুল ঝাড়ু নিয়ে এসেছেন মেলায়। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, বাবা দুই দশক ধরে এই মেলায় ফুল ঝাড়ু বিক্রি করেছেন। গত বছর তিনি মারা গেছেন। আগে বাবার সাথে এলেও এবার একাই এসেছি। দুই লাখ টাকার ঝাড়ু এনেছি। শুক্রবার ৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। বাকি ঝাড়ু শনিবারের মধ্যেই বিক্রি হবে বলেই আশা করছি।

 

শুধু ইলিয়াস নন- তার মতো অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বিক্রেতা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জব্বারের বলী খেলার মেলায় বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে এসেছেন। একেকজন ১ লাখ থেকে ১০-১৫ লাখ টাকার পর্যন্ত পণ্য এনেছেন। আন্দরকিল্লা, সিনেমা প্যালেস, কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত বসা মেলায় গৃহস্থালী পণ্য ছাড়াও গাছের চারা, খাবারও মিলছে। আজ শনিবার শেষ দিনে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।

 

মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শওকত আনোয়ার বাদল পূর্বকোণকে বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসা তিন দিনের এই মেলায় প্রতিদিন কয়েক লাখ ক্রেতার সমাগম হচ্ছে। কয়েক হাজার দোকানি সড়ক-গলিতে তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। আমরা আশা করছি এবার মেলায় শত কোটি টাকার ব্যবসা হবে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট