মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিতায় অনেকটা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে থাকে কোনো না কোনো প্রাণিজ আমিষ। অন্যদিকে সংশ্লিষ্টদের মতে দেশে পোষা প্রাণীর সংখ্যা অর্ধকোটির বেশি। তাই মানব স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত প্রাণির স্বাস্থ্যও। তবে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী প্রাণির স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা চিকিৎসকের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম।
অথচ জার্মানভিত্তিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টার তথ্যানুযায়ী দেশে কেবল পোষাপ্রাণীর বাজারই প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার। অবশ্য সংশ্লিষ্ট দেশীয় গবেষকদের মতো সামগ্রিকভাবে পোষাপ্রাণী খাতের বাজার এখন ১০ হাজার কোটি টাকার।
চট্টগ্রামে প্রাণীস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকটা সামনের সারিতেই আছেন নগরীর ওয়ারলেস এলাকার ভেটেরিনারিয়ান ডা. মো. সাদ্দাম হোসেন। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে সরাসরি নেমে পড়েন প্রাণী চিকিৎসায়। প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকেই ২০১৮ সালে নগরীর ওয়ারলেস এলাকায় গড়ে তোলেন ‘বার্ডস এন্ড পেট এনিম্যাল ক্লিনিক-বিপিএসি’। ওই ক্লিনিকে গড়ে দৈনিক ১৫টি প্রাণির চিকিৎসা সেবা দেন তিনি।
গতকাল ওয়ারলেস এলাকায় নিজের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানেই কথা হয় ডা. মো. সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রাণীর চিকিৎসায় বেসরকারি উদ্যোগে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখন অনেকে ভেটেরিনারিতে পড়াশোনা করতেছে, প্রাণী চিকিৎসায় আসতেছে। বিভিন্ন জায়গায় ক্লিনিক হচ্ছে। চট্টগ্রামেও এখন ৬টা পেট ক্লিনিক রয়েছে, সেসব ক্লিনিকে পোষাপ্রাণীর চিকিৎসা হয়। মানুষ এখন ‘ভেট’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। এখন আর আগের মতো অজ্ঞতা নেই।
প্রাণীর চিকিৎসায় সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, এটি বিশাল একটি খাত। কারণ সব দেশের অন্যান্য সব খাত এই খাতের সঙ্গে জড়িত। প্রাণিজ আমিষ ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। আবার দেশে কয়েক মিলিয়ন পোষাপ্রাণী আছে। প্রতি বছর কোরবানিতেও এক কোটির বেশি পশু জবাই হয়। এই খাতটা ক্রমবর্ধমান। তাই মানবস্বাস্থ্যের সঙ্গে প্রাণীস্বাস্থ্যও জড়িত। আবার প্রাণিস্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তাদের চিকিৎসা, ওষুধ আর খাবারের প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে এটা ১০ হাজার কোটি টাকার বাজার এখন। বেসরকারি উদ্যোগে এতটুকু এসেছে, এই খাতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
প্রাণী চিকিৎসায় নিজের অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ভালো লাগা থেকেই সিভাসুতে ভর্তি হয়েছিলাম। শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় বিভিন্ন প্রাণীর চিকিৎসা নিয়ে কাজ করেছি। স্নাতক শেষে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করেছি। এক পর্যায়ে নিজেই একটা ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছি। আলহামদুলিল্লা, এখন সবাই ভেটেরিনারিয়ান হিসেবেই চেনেন আমাকে। যেহেতু এই খাত সম্পর্কে ভালো জানাশোনা আছে, নিজেকে ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে পরিচয় দিতেও ভালো লাগে।
ভেটেরিনারিয়ান কাজের ক্ষেত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের সব খাত প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্কিত। ধরেন কোনো প্রতিষ্ঠান খাবার নিয়ে কাজ করে, সেখানে দুধ, ডিম, দুধের মান যাচাইয়ে ভেটেরিনারিয়ান প্রয়োজন। কেউ যদি খামার দেয় সেখানে পশু-পাখির চিকিৎসার জন্য ভেটেরিনারিয়ান প্রয়োজন। পোষা প্রাণী তো আছেই, সাপ থেকে যে এন্টিভেনম তৈরি হয়, এই সাপেরও চিকিৎসার দরকার হয়। সেখানেও ভেটেরিনারিয়ান প্রয়োজন। প্রাণী সম্পর্কিত সব জায়গায় ভেটেরিনারিয়ানদের কাজের সুযোগ আছে।
বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস আজ:
বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস আজ। বিবিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রাণীর চিকিৎসায় নিয়োজিত কর্মীদের সম্মানার্থে প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার দিবসটি পালন করা হয়। দেশেও ‘সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রাণী স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালন করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। চট্টগ্রামে দিবসটি ঘিরে র্যালি, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)। বিশ্ববিদ্যালয়টির মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বকোণ/ইব