টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে ভাসছে চকরিয়া ও পেকুয়ার অন্তত তিন লক্ষাধিক মানুষ। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের মধ্যে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে প্রায় সবকটি। উপজেলার আভ্যন্তরীণ জিদ্দাবাজার-মানিকপুর সড়ক, চিরিঙ্গা-বদরখালী সড়ক, কেবি জালাল উদ্দিন সড়কসহ বেশিরভাগ আঞ্চলিক সড়কের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছাড়া চকরিয়া ও পেকুয়ার বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুত না থাকায় অধিকাংশ এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী এবং পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী, টৈটং, শিলখালী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
চকরিয়ার কন্যার কুমের বেড়িবাঁধ ও পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামার বেঁড়িবাধসহ কয়েকটি বাধ ভেঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি লোকলয়ে প্রবেশ করায় বন্যার পানি দ্রুত বাড়ছে। পাহাড়ি ঢলের প্রবেশমুখ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন ও কাকারা ইউনিয়ন ৭-১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশের উপর দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে উপচে আসা ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় বসতঘরগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
চকরিয়া ও পেকুয়ার বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। অধিকাংশ মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। শুকনো খাবার ছাড়া রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই বেশিরভাগ পরিবারে।
অন্যদিকে, চকরিয়া পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের ১নং বেড়িবাঁধটি যেকোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার শংকায় আছেন স্থানীয়রা। বেঁড়িবাধটি রক্ষার জন্য পৌরসভার কর্মকর্তারা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, ভারী বৃষ্টিতে পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা নিষ্কাশনে কাজ করছে। ৯নং ওয়ার্ডের ১নং বেড়িবাঁধটি রক্ষার জন্য বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম ও কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন জানান, আমাদের ইউনিয়নগুলো মাতামুহুরী নদীর সাথে লাগোয়া। এজন্য পাহাড় থেকে নেমে ঢলের পানি আগে আঘাত আনে এসব ইউনিয়নগুলোতে। এই দুই ইউনিয়নে অধিকাংশ ঘর পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। গত দুইদিন ধরে তাদের রান্নার কাজও বন্ধ। শুধু শুকনো খাবার খেয়ে রয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করতে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, বন্যা কবলিত সবকটি ইউনিয়ন সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী প্রায় দুই লক্ষাধিক লোক পারিবন্দী রয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষদের নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যেসব মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরও বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার দেয়ার হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বানিবন্দী পরিবারগুলোকে প্রাথমিকভাবে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে সকল চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়েছি। চকরিয়ার বন্যার ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে অবহিত করে ত্রাণ বরাদ্দ চেয়েছি।
এদিকে চকরিয়ার মাতামুহুরি নদীতে পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা লাকড়ি ধরতে গিয়ে নদীর পানিতে ডুবে আব্দু রশিদ নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১টার দিকে নিখোঁজ হওয়া যুবকের মরদেহ বিকাল ৩টার দিকে মাতামুহুরী নদীর লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের নদীর মোহনা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী। তিনি জানান, পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরি নদীতে ভেসে আসা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে রশিদ নামের ওই যুবক নিখোঁজ হয়। ২ ঘণ্টা পর লক্ষ্যরচর ইউনিয়নস্থ নদীর মোহনা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পূর্বকোণ/মাহমুদ