লাভের আশায় বিপুল ব্যয়ে কেনা লাগেজ ভ্যান থেকে প্রত্যাশিত আয় করতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফলে এসব লাগেজ ভ্যান এখন রেলওয়ের ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে লোকসান এড়াতে লাগেজ ভ্যান পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি খাতে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানান- লাগেজ ভ্যান কিনতে ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট ৩৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার চুক্তি হয় চীনের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এ সময় প্রতিটি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যানের দাম ৩ কোটি ৫ লাখ এবং প্রতিটি মিটার গেজ লাগেজ ভ্যানের দাম ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রেলওয়ের বহরে যুক্ত হয় ১২৫ লাগেজ ভ্যান।
নতুন এসব লাগেজ ভ্যান যুক্ত হওয়ার আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পার্সেল পরিবহনে রেলের আয় হয়েছিল ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে লাগেজ ভ্যানগুলো যুক্ত হওয়ার পর শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) মাত্র ২২ লাখ টাকা বেড়ে আয় হয়েছিল ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
লাগেজ ভ্যান থেকে আয় বাড়াতে গত বছরের ২৪ অক্টোবর খুলনা, পঞ্চগড় ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে তিন জোড়া ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’ চালু করে রেলওয়ে। কিন্তু কৃষকদের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে চালুর এক সপ্তাহের মধ্যে এসব ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২৪ অক্টোবর যাত্রার প্রথম দিন কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন পঞ্চগড় ছেড়েছিল কোনো পণ্য ছাড়াই।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন- কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে সমীক্ষা হলেও কৃষক কিংবা ব্যবসায়ীদের চাহিদা, বাজার যাচাই না করেই ব্যক্তিস্বার্থে কেনা হয় লাগেজ ভ্যান। প্রয়োজন নেই জেনেও লাভ দেখিয়ে রেলওয়ের সেই সময়কার কিছু কর্মকর্তা ও মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে লাগেজ ভ্যান কিনতে বিপুল টাকা ব্যয় করা হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, লাগেজ ভ্যানগুলো ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সুফল পেতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু ফল পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. হাদীউজ্জামান বলেন, কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের নামে সমীক্ষায় ভাঁওতাবাজি করা হয়েছে। যারা সমীক্ষা, প্রকল্প যাচাই, অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করেছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় না আনলে প্রকল্পের নামে লুটপাট বন্ধ হবে না।
তিনি বলেন, লাগেজ ভ্যান যে অস্বাভাবিক দামে কিনেছে, তার চেয়ে অনেক কম দামে যাত্রীবাহী কোচ (বগি) কেনা যায়। লাগেজ ভ্যানে এমন কী আছে যে, এগুলো এত দাম দিয়ে কিনতে হবে? তাছাড়া লাগেজ ভ্যান কিনতে নানা পরিকল্পনা করলেও বাস্তবে এসব লাগেজ ভ্যান ব্যবহারে কৃষক ও উদ্যোক্তাদের তেমন উৎসাহী করতে পারেনি রেলওয়ে।
পূর্বকোণ/ইবনুর