যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা লঙ্ঘনের জন্য একে অপরকে অভিযুক্ত করেছে ভারত ও পাকিস্তান। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাওয়ার পর, শনিবার (১০ মে) রাতেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী বলেন, ‘আমরা যে সমঝোতায় পৌঁছেছিলাম তা বারবার লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
এর কিছুক্ষণ পর, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘আমরা যুদ্ধবিরতির বিশ্বস্ত বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ… যদিও কিছু এলাকায় ভারত তা লঙ্ঘন করছে।’ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল ভঅরত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হয়। এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে গত বুধবার পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও আর্টিলারি দিয়ে হামলা চালায় ভারত।
যদিও পাকিস্তান পেহেলগাম হামলার সঙ্গে কোনও সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে। তবে তারা ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়া জানায়। এতে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভবনা দেখা দেয়।
চার দিনব্যাপী সীমান্তপারের হামলা-প্রতি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান জানায়, তারা একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার সকালে তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এই সংবাদ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির মধ্যস্থতা করেছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরে নিশ্চিত করেন যে দুই দেশ একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে, এবং জানান তিন ডজন দেশ এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় জড়িত ছিল।
যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, দুই দেশ গুলি চালানো ও সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধের বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে।
তিনি আরও বলেন, ভারত সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও আপোষহীন অবস্থান বজায় রেখেছে এবং তা বজায় রাখবে।
পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, যুদ্ধবিরতি সবাইয়ের কল্যাণের জন্য হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ভারত ও পাকিস্তান একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে।
কিন্তু যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগর ও জম্মুর বাসিন্দারা বিস্ফোরণের শব্দ ও আকাশে আলোর ঝলকানির খবর দেন।
গভীর রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এর তীব্র নিন্দা জানান ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি দাবি করেন, যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান “ফের গোলাগুলি” শুরু করেছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর জন্য “সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তান” দায়ী।
তিনি আরও দাবি করেন, ভারতীয় সেনারাও এর সমুচিত জবাব দিচ্ছে এবং পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ভারত আশা রাখে, পাকিস্তান পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে অবিলম্বে এই চুক্তিভঙ্গ বন্ধ করবে।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, যেকোনও ধরনের অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের মোকাবিলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পূর্বকোণ/পিআর