চট্টগ্রাম সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

যথাসময়ে ইফতার গ্রহণে মিলবে সাফল্য ও উন্নতি

রায়হান আজাদ

১০ মার্চ, ২০২৫ | ১২:৪২ অপরাহ্ণ

ইফতার আরবি শব্দ; এর অর্থ উপবাস ভঞ্জন করা। পরিভাষায় ইফতার হচ্ছে- সূর্যাস্তের সাথে সাথে রোজা পালনকারী কোন কিছু খেয়ে রোজা ভেঙে দেয়া। ইফতার গ্রহণ সুন্নাত। শারীরিক স্থিতিশীলতা, গতিশীলতা ও অপরিসীম বরকত হাসিলের জন্য ইফতার করা প্রয়োজন।

 

ইফতার রকমারি নাস্তার পসরা নয়; যেকোন কিছু খেয়ে রোজা ভেঙে ফেলা মাত্র। ইফতারের মধ্যে প্রচুর সাওয়াব, কল্যাণ, আনন্দ ও তৃপ্তি রয়েছে। পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ। অজু করে পাক-সাফ হয়ে ইফতার করতে যাওয়া উত্তম।

 

ইফতার গ্রহণের পূর্বে পড়ার একটি প্রসিদ্ধ দোয়া রয়েছে। এ দোয়া পড়ে ইফতার শুরু করলে অনেক সাওয়াব হয়। দোয়াটি হচ্ছে- ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু।’

 

ইফতারির সময়টি রোজাদারের জন্য দারুণ আনন্দের। এ সময় চাপা চাপা খুশিতে সবার মন ভরে ওঠে। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রোজাদারের আনন্দের সময় দুটো। একটি ইফতারের সময়, অন্যটি আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ লাভের সময়।

 

আমাদের সামাজিক জীবনে অনুপম ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের নমুনা সৃষ্টি হয় ধনী-দরিদ্র, মালিক-শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্ধারিত সময়ে ইফতার গ্রহণের মধ্য দিয়ে। ইফতারের সময় দোয়া করার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন শ্রেণির লোকের দোয়া ব্যর্থ যায় না; ইফতারের প্রাক্কালে রোজাদারের দোয়া, ন্যায়পরায়ণ নরপতির করজোড়ে মিনতি ও মজলুমের বুকফাটা ফরিয়াদ।

 

খেজুর দিয়ে ইফতার করা উত্তম। এতে অশেষ বরকত ও ফজিলত রয়েছে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের পূর্বে গুটিকয়েক রুতব অর্থাৎ আধাপাকা বা সদ্যপাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। রুতব না পেলে পূর্ণ পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি তাও না পেতেন তাহলে কয়েক কুলি পানি দ্বারা ইফতার করতেন। (আহমদ, আবু দাউদ ও তিরমিজি)।

 

ইফতার গ্রহণে পরিমিতিবোধ বজায় রাখা উচিত। পেট পুরে ভাজা-পোড়া খাওয়া ঠিক নয়। ইফতারের ক্ষেত্রে ইসলামে যেসব খাবার গ্রহণ ও বর্জন করার উপদেশ দেয়া হয়েছে সেটা আমাদের লক্ষ্য করা উচিত। অতিরিক্ত ভোজন ইসলামি পদ্ধতি নয়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘নিশ্চয় প্রকৃত মুমিন স্বল্পভোজী, পরিমাণমতো খায়; আর কাফের নাক ডুবিয়ে খায়।’ এখানে অতিভোজন পরিহারের জন্য উপদেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রিয়নবী ও সাহাবিগণ সবসময় স্বল্পভোজী ছিলেন।

 

উপমহাদেশের খ্যাতিমান মুফাসসির হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলি থানভি (রহ.) ইফতারকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। ইফতারে আসগর- যা রোজাদার প্রতিদিন গ্রহণ করে থাকে এবং ইফতারে আকবর- যা পবিত্র ঈদুল ফিতর নামে অভিহিত; এদিন রোজাদারদের খাওয়ার দিন, খুশির দিন।

 

ইফতার গ্রহণ করা শারীরিকভাবে যেমন প্রয়োজন, তেমনি শরিয়তে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মত কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে এবং দেরিতে সাহরি খাবে। (আহমদ)। অন্য একটি হাদিসে রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমার কাছে সর্বাপেক্ষা বড় বান্দা তারাই যারা যথাসময়ে ইফতার করে।’ (তিরমিজি)।

 

বোখারি শরিফে আছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করলে মুসলমানরা সাফল্য ও উন্নতি লাভ করবে। অন্যান্য কিতাবধারীরা বিলম্বে ইফতার করে।’ আল্লাহ পাক আমাদেরকে সুন্নাত অনুসারে ইফতার গ্রহণের তৌফিক দান করুন; আমিন।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট