চট্টগ্রাম শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বরে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড, যানজটে ভোগান্তি
শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বরে সড়কের ওপর থেকে বাস-মিনিবাসগুলো এভাবে ছাড়া হয়

শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বরে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড, যানজটে ভোগান্তি

নাজিম মুহাম্মদ

৬ মে, ২০২৫ | ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ

নগরের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ শাহ আমানত গোলচত্বরে বিভিন্ন পরিবহনের জটলা লেগেই থাকে। এছাড়া রয়েছে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড। এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে থাকে বিভিন্ন যানবাহন। ফলে যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।

 

বছরের পর বছর ধরে শাহ আমানত সেতু-পটিয়া রুটে চলাচল করছে ১৯১টি হিউম্যান হলার। এসব যানবাহনের নেই ফিটনেস; নেই কোন রুট পারমিট। শুধু হিউম্যান হলার নয়, শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর থেকে অন্তত ২১ ধরনের যানবাহন চলাচল করে নগর এবং জেলার বিভিন্ন এলাকায়। এসব যানবাহনের কোনটির অনুমোদিত রুট পারমিট নেই। এ ধরনের কয়েক হাজার যানবাহনের অবৈধ স্টপেজের কারণে সেখানে যানবাহনের কোনো শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে। যানবাহনগুলো অবৈধভাবে চললেও অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে ট্রাফিক বিভাগ। গুঞ্জন রয়েছে, প্রতিটি যানবাহনের লাইন থেকে মাসিক মাসোহারা নিয়ে থাকে ট্রাফিক ও পটিয়া হাইওয়ে পুলিশ। তবে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

 

গতকাল সোমবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর থেকে সেতুর ভেতরের অংশ পর্যন্ত অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের চাপে মোড় পার হতে একেকটি যানবাহনের সময় লাগছে আধ থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত। সড়কের ওপর থেকে ছাড়া হচ্ছে পটিয়া-শান্তিরহাটগামী হিউম্যান হলার, বাস-মিনিবাস, নিউ মার্কেটমুখী মাহিন্দ্রা ও লেগুনা। পুরো গোল চত্বর জুড়ে অবৈধযানের ছড়াছড়ি। গোল চত্বর থেকে সেতুর প্রবেশমুখে দাঁড়ানো রয়েছে গ্রাম সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও একাধিক বাস। ট্রাফিক পুলিশ সরানোর নিষ্ফল চেষ্টা করছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, শান্তিরহাট, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালীর উদ্দেশে প্রতিদিন ছেড়ে যায় হাজারেরও বেশি যানবাহন। এরমধ্যে রয়েছে হিউম্যান হলার, লেগুনা, বাঁশখালী সার্ভিস মিনিবাস, ঈগল ফার্স্ট সুপার সার্ভিস, ঈগল প্লাস, ঈগল, ঈগল-১ ও ঈগল স্পেশাল সার্ভিস। শুধু ঈগল নাম দিয়ে পাঁচটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে প্রায় ২২০টি বাস ছাড়া হচ্ছে প্রতিদিন। কোনটি যাচ্ছে চন্দনাইশ, কোনটি যাচ্ছে সাতকানিয়া আবার কোনটি যাচ্ছে লোহাগাড়া কিংবা চকরিয়া।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আন্তঃজেলা বিলাসী কোস্টার, চেয়ার কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জানান, ২০১১ সালে ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়। সেই সময় সিডিএ তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সড়ক বিভাগ শাহ আমানত সেতু এলাকা আটটি যানবাহন ছাড়ার অনুমতি দেয়। এরপর থেকে শাহ আমানত সেতু এলাকায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যায়। পরবর্তীতে বহদ্দারহাট টার্মিনাল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লে রুট না থাকা সত্তে¡ও অধিকাংশ যানবাহন গোলচত্বর থেকে ছাড়া হচ্ছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় দোকানদার জানান, ঈগল বাসগুলো ছাড়ার জন্য লাল ভবনের সামনে নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চালকরা বাস ছাড়ে সড়কের ওপর থেকে। এতে বহদ্দারহাট থেকে কক্সবাজারগামী অন্যান্য যানবাহন যানজটে আটকে থাকে। এসব যানবাহন সিন্ডিকেট থেকে শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর, মইজ্জ্যার টেক, পটিয়ার ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) ও হাইওয়ে পুলিশের টিআই মাসে কেউ ৩০ আবার কেউ ৪০ হাজার নিয়ে থাকেন এমনটি গুঞ্জন রয়েছে। মইজ্জ্যার টেক এলাকার টিআইয়ের মাসিক চাঁদা তোলার কাজ করেন ট্রাফিকের রেকার চালক শাহ আলম ও সৈয়দ।

 

অবৈধভাবে যানবাহন চলাচলের তথ্য থাকা সত্ত্বেও আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর এলাকার টিআই তুহীন আহমদ জানান, শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে গাড়ি ছাড়া হচ্ছে। রুট পারমিট নেই তাও ঠিক আছে। আমার যে জনবল রয়েছে, তা দিয়ে মূলত যানজট নিরসনের কাজ করে থাকি। এ জনবল দিয়ে অভিযান চালানো সম্ভব নয়।

 

মইজ্জ্যারটেক এলাকায় দায়িত্বরত টিআই আবু সাইয়েদ জানান, শাহ আলম নামে একজন রেকার চালক আছে তা ঠিক। কিন্তু আমি কারো সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করি না। হিউম্যান হলার কিংবা অন্য বাস মিনিবাসগুলো একাধিক গ্রæপে বিভক্ত। এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়।

 

পটিয়া হাইওয়ে পুলিশের টিআই জসিম উদ্দিন জানান, গাড়িগুলো অবৈধভাবে চলে তা আমরাও জানি। মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়। তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।

 

জেলা ট্রাফিকের পটিয়ায় দায়িত্বরত টিআই ওমর ফারুক বলেন, আমি এসেছি মাত্র একমাস আগে। বিষয়টি আমি জানি না। গতমাসেও আমি শতাধিক যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট