চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে ডা. শাহাদাত হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। গতবছরের ৫ নভেম্বর তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ ছয় মাস তিনি নগরবাসীর জন্য কী কী করেছেন এবং কী কী করার চেষ্টা করছেন সেসব বিষয়ে আলাপকালে মেয়র বলেন, এই ছয় মাসে আমি কী করেছি সেটা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। ষাটের দশকে ১৫-২০ লাখ লোকের শহর ছিল চট্টগ্রাম। সেই সময়ের মতো গড়তে না পারলেও ক্লিন, গ্রিন, হেলদি এবং অবশ্যই সেফ সিটিতে পরিণত করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছি। কাজ করে যাবো।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে তিন অনুরোধ মেয়রের: প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমি কয়েকটা অনুরোধ করেছিলাম। ১৬শ কিলোমিটার নালা ও খাল পরিষ্কারের জন্য যন্ত্রপাতি কেনার ৩৯৮ কোটি টাকা। আন্দরকিল্লায় নগরভবন নির্মাণের জন্য ২০০ কোটি টাকা। জলাবদ্ধতা নিরসনের যে সেকেন্ডারি প্ল্যান, রিসাইকেল করে ময়লাটাকে সম্পদে পরিণত করা। এটার জন্য ইউকে’র একটি প্ল্যান দিয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আসার আরও ১০ দিন বাকি আছে; আমি আশা করবো অন্তত তিনটি প্রজেক্ট তিনি ঘোষণা করবেন।
যানজট কমাতে হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ: নিউমার্কেট এলাকায় হকারদের কারণে দীর্ঘদিন ধরে যানজট লেগে থাকতো। হকারদের সঙ্গে কথাবার্তার মধ্য দিয়ে সেখানে একটি শৃঙ্খলা এনেছি। বিকেল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা কেবল তারা বসবে। তাদের পার্মানেন্টলি তুলে দেয়ার জন্য রেলস্টেশনের পাশে রেলওয়ের একটি জমি চেয়েছি। গত সপ্তাহে ঢাকায় রেল উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
জহুর হকার্স মার্কেট দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যবসায়ী কুক্ষিগত করে ফেলেছে। ৬০০-৭০০ ব্যবসায়ী মনে করেন তারাই সেটার মালিক। এটা ২০০ গন্ডার একটা জায়গা। এখানে ২০ তলা ভবন করা কোন ফ্যাক্টর না। এই ২০ তলা ভবনে ৪-৫ হাজার হকারকে আমরা পুনর্বাসন করতে পারবো। রেজিস্ট্রেশনবিহীন ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে নগরজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নগর পুলিশের সহয়তায় এখন তাদের দৌরাত্ম্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বাড়াতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাচ্ছি: জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে প্রথম ধাপ জনসচেতনতা। এজন্য আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে যাচ্ছি। সবাইকে সচেতন করছি। দ্রুতই চাইল্ড হেলথ, স্কুল হেলথ, হেলথ কার্ড করছি। প্রথমে আমাদের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো দিয়ে শুরু করছি। এরপর প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবো। কারণ আমি চিন্তা করছি আমাদের রুট লেভেলে চলে যেতে হবে। বাচ্চাদের শেখাতে হবে ময়লা কোথায় ফেলতে হবে। কীভাবে তারা নিজে পরিচ্ছন্ন থাকবে, কীভাবে পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখবে।
সমস্যার কথা শুনতে ‘আমার চট্টগ্রাম’ অ্যাপ চালু: খুব দ্রুত আমার চট্টগ্রাম নামে একটি অ্যাপ চালু করতে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে যে কেউ যেকোন সমস্যা আমাদের জানাতে পারবেন; হকার, ময়লা আবর্জনা, নালার প্রিভেন্টিভ ম্যাজরস, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার নেই, শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষক নেই- এসব ১০টি ক্যাটাগরিতে জানাতে পারবেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো।
ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান করার পরিকল্পনা: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান করার চিন্তা করছি। নগরীতে ৫৭টি খাল আছে। ৩৬টি খাল নিয়ে সিডিএ কাজ করছে। এর বাইরে আরও ২১টি খাল আছে। এসব খাল সংস্কারে প্রকল্প নিতে আমরা কাজ করছি। চীনা একটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তারা সম্মত হলে জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে এই প্রকল্পে আমরা হাত দেবো।
যত্রতত্র পোস্টারিং থামাতে নীতিমালা করা হবে: যত্রতত্র পোস্টারিং না করার জন্য আমি বহুবার বুঝিয়েছি। কিন্তু এরপরও দেখছি বিভিন্ন কোচিং সেন্টার বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পোস্টারিং করে যাচ্ছে। আমাদের সময় এসেছে এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করার।
চট্টগ্রামকে সবুজ শহর করতে বর্ষায় ১০ লাখ গাছ রোপণ: চট্টগ্রামকে সবুজ শহর করতে আগামী বর্ষাকে কেন্দ্র করে করে নগরীতে ১০ লাখ গাছ রোপণ করবো। আগ্রাবাদ ঢেবারপাড়ে আমি একটি ওয়াকওয়ে করার জন্য চেষ্টা করছি। এটা নিয়ে আমি বন্দর চেয়ারম্যান ও রেলওয়ের সাথে বসেছি।
বন্দর থেকে ১৪৫ কোটি টাকার হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়: এতবছর ধরে বন্দর মাত্র ৪০ কোটি টাকা ট্যাক্স দিতো। আমি ইতোমধ্যে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা আদায় করেছি। আরও ১৫ কোটি টাকা তারা পরিশোধ করবে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ইস্টার্ন রিফাইনারি আমাদের কমার্শিয়াল ট্যাক্স দেয় না। আমরা এসব প্রতিষ্ঠানকেও এড্রেস করছি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পিছনে মাসে ৬-৭ কোটি টাকা ভর্তুকি: অনেকেই মনে করতে পারেন এ রাজস্ব নিয়ে আমরা কী করছি? আমরা ৩২ কোটি টাকা মাসে খরচ করছি। যার মধ্যে ৬-৭ কোটি টাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পিছনে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলে প্রায় ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
৪১ ওয়ার্ডে ৪১টি খেলার মাঠ করার ঘোষণা: ৪১টি ওয়ার্ডে ৪১টি খেলার মাঠ করার ঘোষণা দিয়েছি; ৬-৭টি মাঠের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। মাঠগুলো নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছি; কারণ তরুণ প্রজন্ম পুরোপুরি অনলাইনে ডুবে গেছে। সুস্থ্য দেহ সুন্দর মন- এই জায়গায় আমাদের ফেরত আসতে হবে। কাজেই মাঠের কোন বিকল্প নেই।
পাহাড়তলী ও বাকলিয়ায় বাস টার্মিনাল করার ঘোষণা: বাকলিয়ায় বাস টার্মিনাল করার ঘোষণা দিয়েছি; সেখানে ভূমিদস্যুরা চলে এসেছে। অথচ জায়গাটা জেলা প্রশাসনের। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সোচ্ছার হওয়া উচিত। সিটি গেট এলাকার যানজট কমাতে পাহাড়তলী গরুর হাটে একটি টার্মিনাল করার চিন্তা-ভাবনা করছি। আমরা একটা প্ল্যান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, এটি বাস্তবায়ন করা গেলে ইনশাআল্লাহ চট্টগ্রাম শহরকে একটি দৃষ্টিনন্দন শহর করা যাবে।
পূর্বকোণ/ইবনুর