এক মাসের কিছু বেশি সময় পর পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। মুসলমানদের পশু কোরবানির এ সময় দেশে চাহিদা বাড়ে মসলার। চাহিদা বৃদ্ধিতে কোরবানির আগে দাম বেড়ে যায় মসলাজাত পণ্যের।
তবে এবার কিছুটা উল্টো ঘটনা ঘটছে দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। কোরবানির আগে দাম কমেছে এলাচসহ কয়েকটি মসলাজাত পণ্যের। অবশ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, মসলার পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় কমতির দিকে দাম। এদিকে চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার টন মসলাপণ্য আমদানির কথা জানালো চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র।
গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে মসলাজাত পণ্যের মধ্যে এলাচের দাম ২০০ টাকার বেশি কমেছে কেজিপ্রতি। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে ধনিয়া ও গোল মরিচের দাম। আবার দু-সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে জিরার দাম। পেঁয়াজের দামও কমতির দিকে খাতুনগঞ্জে। গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে পণ্যটির দাম। গত বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে কেজিপ্রতি এলাচ ৪ হাজার ৭০, লবঙ্গ ১ হাজার ২৪০, জিরা ৬০০, ধনিয়া ১৫০, দারুচিনি ৩৯০, স্টার ৭৮০, গোল মরিচ ১ হাজার ৮০ এবং জয়ত্রী ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কোরবানির আগে মসলাজাত পণ্যের দাম কমার বিষয়ে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান মিন্টু বলেন, বিভিন্ন কারণে খাতুনগঞ্জে পণ্যের বিক্রি কমে গেছে এখন। তাই চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি। আর সরবরাহ বেশি থাকায় কিছু পণ্যের দাম কমছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়েও অনেক সময় নানা পণ্যের দাম কমে।
অনেকটা একই কথা বলেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার-সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু মসলাজাত পণ্যের দাম কমায় দেশের বাজারেও কমেছে। আবার কোরবানির ঈদ ঘিরে এবার সরবরাহ তুলনামূলক বেশি। তাই কিছুটা কমতির দিকে দাম।
চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে এক লাখ ৬৯ হাজার ৮৩৪ দশমিক ৪২ টন মসলা আমদানির কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম। তিনি জানান, এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে দেশে সবচেয়ে বেশি ৯৯ হাজার ৮৫৮ টন রসুন আমদানি করা হয়েছে। অন্যান্য মসলার মধ্যে এলাচ ১ হাজার ৬১৪ দশমিক ৬, দারুচিনি ১০ হাজার ৫৪৩, লবঙ্গ ২ হাজার ১৫৪, জিরা ৩ হাজার ৭০২, পেস্তাবাদাম ৮২৭, কেশিয়া পাউডার ৩৭৫, কিসমিস ৪ হাজার ৮২৩, শাহী জিরা ২, জয়ত্রী ২৯০, কাবাব চিনি ২, জারফল ২৭২, কালিজিরা ৭, গোল মরিচ ১ হাজার ৯ দশমিক ৭২, মেথি ৭২, আদা ২১ হাজার ১৯, পিয়াজ ১৪ হাজার ৬৩ দশমিক ৬, হলুদ ৪ হাজার ৩২৮, শুকনো মরিচ ১৭৯ দশমিক ৭, ওয়ালনট ১৭৫, অনিয়ন পাউডার ৪৩৯, জিনজার পাউডার ৩৭ দশমিক ৮, গারলিক পাউডার ৭৩২, পি-নাট ৮৮, ড্রাই অনিয়ন লিভ ১৩৮, কোকোনাট ফ্যাট ৮৮৮, কেশিও নাট ৯৮৫, মৌরি ৭১২ টন আমদানি করা হয়েছে।
মশলা গবেষণাকেন্দ্রের তথ্যানুসারে দেশে বছরে মসলার চাহিদা ৩৩ লাখ টন। এরমধ্যে দেশে উৎপাদন হয় ২৭ লাখ টনের বেশি। বাকি মসলা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এরমধ্যে অধিকাংশ মসলা স্থলপথে আমদানি করা হয় প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। আবার সমুদ্রপথে আসা মসলা দেশে প্রবেশ করে তিন বন্দর দিয়ে। অবশ্য সমুদ্রপথে আসা সিংহভাগ মসলা দেশে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়েই।
পূর্বকোণ/ইবনুর