আমন মৌসুমে চট্টগ্রামে ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র দুই দশমিক ৬৫ শতাংশ। শুধু সন্দ্বীপ ও ফটিকছড়ির কৃষক ছাড়া অন্য উপজেলার কৃষকেরা সরকারকে ধান দেয়নি। অথচ আমন আবাদ হচ্ছে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় চাষ। এখন বোরো মৌসুমে ধানের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশয়-শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খাদ্য কর্মকর্তা ও কৃষকেরা। তবে গতবারের তুলনায় এবার ধান-চালের দাম কেজিতে ৪ টাকা করে বাড়িয়েছে সরকার।
চলতি বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। কৃষকদের কাছ থেকে ধান ও মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করবে খাদ্য বিভাগ। ২৪ এপ্রিল শুরু হওয়া এই সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে চট্টগ্রামে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ হাজার ৬২৯ টন। এরমধ্যে আতপ চাল ৬ হাজার ৩৩ টন। সিদ্ধ চাল ৫৯৬ টন। আর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ হাজার ৩৫৯ টন।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকেরা জানান, চট্টগ্রামে ধান উৎপাদন কম। এছাড়াও সরকারের চেয়ে বেরসকারি পর্যায়ে ধানের দাম বাড়তি থাকে। তাই কৃষকেরা সরকারের চেয়ে বেসরকারি বা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে ধান বিক্রিতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। চলতি বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ৩৫৯ টন। এরমধ্যে বেশি লক্ষ্য ধরা হয় বাঁশখালীর চাঁনপুর এলএসডি গুদামে ৭৭৯ টন, রাঙ্গুনিয়ায় ৫৯৭ টন, নাজিরহাটে ৫৩১ টন ও সাতকানিয়ায় ৪৮০ টন। নগরীর দেওয়ানহাট, জেলার স›দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, কাটিরহাট, হাবিলদারবাসা গুদামে ধান সংগ্রহ লক্ষ্য ধরা হয়নি।
সদ্য শেষ হওয়া আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৮১৮ টন। এর বিপরীতে ধান সংগ্রহ হয়েছে ২৮৬ দশমিক ৬৮০ টন। যা দুই দশমিক ৬৫ শতাংশ। স›দ্বীপ ও ফটিকছড়ি ছাড়া অন্য উপজেলা থেকে ধান সংগ্রহ করা যায়নি।
চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মো. ফখরুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে কৃষক যাতে ধানের ভালো দাম পায়। কৃষক ভালো দাম পাচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য অনেকটা পূরণ হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত আমন মৌসুমে চট্টগ্রামে আবাদ হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে। আমন হচ্ছে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় চাষ। চলতি বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ হয়েছে ৬৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে।
কৃষি বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে আমনের চেয়ে বোরো আবাদ কম হয়েছে দুই দশমিক ৫৮ ভাগ। বড় আবাদ হওয়া সত্তে¡ও আমনে ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে মাত্র দুই দশমিক ৬৫ শতাংশ। সেই হিসাব বিশ্লেষণ করে এবার বোরো মৌসুমে ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খাদ্য কর্মকর্তারা।
বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের চাষি কুমকুম দাশ বলেন, ধানের ওজনে কারচুপি ও আর্দ্রতার নামে ৩০-৪০ শতাংশ বাদ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য গুদামে এভাবে কৃষকদের ঠকানোর প্রণবতা চলে আসছে। হয়রানির কারণে কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, সরকারের চেয়ে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা ধানের ভালো দাম দেয়। ক্ষেত-উঠোন থেকে নিয়ে যায়। তাই কৃষকেরা তাদের কাছে ধান বিক্রিতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন।
খাদ্য কর্মকর্তা ফখরুল আলম বলেন, চট্টগ্রামে ধান উৎপাদন কম। অন্য জেলা থেকে সংগ্রহ করে এখানকার চাহিদা মেটাতে হয়। তাই ধানের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ধানের দাম একটু বেশি। তবে চালের বাজার কম রয়েছে। আশা করছি, চালের লক্ষ্য অর্জন সন্তোষজনক হবে।
সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সবচেয়ে বেশি ধান ও চাল সংগ্রহ করে বোরো মৌসুমে। বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সরবরাহের জন্য অভ্যন্তরীণ ছাড়াও বিদেশি উৎস থেকে চাল ও গম আমদানি করে সরকার মজুদ বৃদ্ধি করে।
চলতি বোরো মৌসুমে সরকার ধান কিনছে কেজিপ্রতি ৩৬ টাকা, আতপ চাল ৪৮ টাকা ও সিদ্ধ চাল ৪৯ টাকা। গত বছরের বোরো মৌসুম থেকে এবার ধান ও ধানের দাম কেজিতে চার টাকা করে বাড়িয়েছে সরকার।
পূর্বকোণ/ইবনু