তাদের কেউ ফুটপাতের হকার। কেউ রিকশাচালক। কেউ বা কাজ করেন নির্মাণশ্রমিক হিসেবে। বেলা গড়িয়ে দুপুর হতেই দিনমজুরা চলে আসেন টিনের ছাউনি ঘেরা ছোট ঘর ‘মেহমানখানা’য়। গরম সাদা ভাত আর নানা পদের তরকারি দিয়ে দুপুরে খান তৃপ্তি ভরে। তবে এ জন্য গুণতে হয় না কোনো টাকা। দিনমজুরদের জন্য নগরীর চান্দগাঁও থানার গোলাম আলী নাজির পাড়া এলাকায় আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে চলছে ‘মেহমানখানা’র এ কার্যক্রম।
ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন তিন বছর ধরে চলা ‘মেহমানখানা’র সব কার্যক্রম তদারকি করেন। আর্থিক সহায়তা দেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। করোনা মহামারীর সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছার পর ২০২০ এর মার্চে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন দিনমজুর হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিরা। অনেকে তিন বেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খান। তাদের কথা মাথায় রেখেই ‘মেহমানখানা’ চালু করা হয়। প্রথমে কয়েকদিনের জন্য এ কার্যক্রম শুরু করা হলেও তা আর বন্ধ হয়নি।
২০২০ এর ১৫ আগস্ট শুরু হওয়া ‘মেহমানখানা’র কার্যক্রম গত তিন বছর ধরে প্রতিদিন চালু রেখেছেন আয়োজকরা। ঝড়, বৃষ্টি, জলাবদ্ধতার মধ্যেও রান্না করা খাবার দিনমজুরদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে প্রতিদিন।
আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, করোনার সময় এক বন্ধু কিছু লোককে খাওয়াতে ফাউন্ডেশনে ৮০ হাজার টাকা দেন। তার অনুমতি নিয়ে ৪ দিনে প্রায় ১ হাজার মানুষকে খাওয়ানো হয়। হঠাৎ মনে আসে- শুধু ৪ দিন কেনো? আমরা এটি মাসব্যাপী চালু রাখবো।
তিনি আরও বলেন, এই কাজে অনেক বন্ধু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। প্রতিদিন কয়েকশ দিনমজুরকে বিনামূল্যে খাওয়ানোর কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখি। এভাবে দিন, মাস, বছর পেরিয়ে আমাদের ‘মেহমানখানা’র কার্যক্রম তিন বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে। ১ লাখের বেশি অতিথিকে আমরা আপ্যায়ন করেছি। এখন প্রতিদিন ২০ কেজি চালের রান্না হয় জানিয়ে নাছির উদ্দিন বলেন, লোকজন ছাগল বা মুরগি দান করলে আমরা তা দিনমজুরদের রান্না করে দিই। না হয়- নানা পদের সবজি দিয়ে তাদের জন্য খাবার তৈরি করা হয়। এই কাজে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বন্ধুরা আমাদের সহায়তা করেন।
পূর্বকোণ/আরডি