চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

পুরোপুরি নারী শিশু প্রবীণবান্ধব হয়নি চট্টগ্রাম

সুবিধা বাড়াতে প্রয়োজন বিনিয়োগ

মিজানুর রহমান

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম নগরী গড়তে হলে নারী, শিশু ও প্রবীণদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। অথচ এখানে শিশুদের চিত্ত বিনোদনে পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। নারীরা ঘরের বাইরে কাজ করতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রবীণরাও আনন্দঘন পরিবেশে সময় কাটানোর পরিবেশ পাচ্ছেন না। পরিবারিক-সামাজিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়লে চট্টগ্রামকে আরও প্রবীণ, নারী ও শিশুবান্ধব করা সম্ভব।

 

প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে দৈনিক পূর্বকোণের বিশেষ ক্রোড়পত্রের জন্য আয়োজিত ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম নগরী: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে আলোচকরা এসব কথা বলেন। আলোচনার চতুর্থ পর্বে চট্টগ্রামকে আরও প্রবীণ, নারী ও শিশুবান্ধব করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে মতামত দেন বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা।

 

আলোচনায় চসিকের প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম বলেন, আগে যৌথ পরিবার বেশি থাকায় সদস্যরা একে অন্যের যত্ন নিতেন। প্রবীণরা আলাদা গুরুত্ব পেতেন। এখন সমাজ ব্যবস্থা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ায় প্রবীণরা কম গুরুত্ব পাচ্ছেন। চট্টগ্রামেও এসব বাড়ছে। শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা মা-বাবাকে ভরণপোষণ দিচ্ছে না। প্রবীণদের যত্ন নেয়ার শিক্ষা শিশু বয়সেই দিতে হবে।

 

তিনি বলেন, আমরা নারীদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কথা বলি। কিন্তু তাদের হতে দেখি না। এটি করতে তাদের আর্থিক সাপোর্ট দেয়া দরকার। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি, বাজেট থাকে না বলে তাদের আর্থিক সাপোর্ট দিতে পারি না। সংঘবদ্ধভাবে সরকারি বা বেসরকারিভাবে যদি আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারি, তাহলে সেটা আরও ফলপ্রসূ হবে। নারীরা এগিয়ে যাবে।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া বলেন, নরীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতাসহ সব বিষয়েই আমরা কাজ করি। তবে কিছুটা কনজারভেটিভ হওয়ায় চট্টগ্রামের চিত্র একটু ভিন্ন। এজন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছি। ৪১টি ওয়ার্ডে শিশু স্বাস্থ্যের জন্য মা ও শিশু ভাতা দিচ্ছি। শিশুর শারীরিক-মানসিক বিকাশে ১৫টি উপজেলায় ক্লাব গঠন করেছি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আগের চেয়ে এখন বেশি নারী কাজে আসছেন। কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল করা হয়েছে। এতে যারা শহরে চাকরির সন্ধানে আসছে তারা নিরাপদে থাকতে পারছে। আমরা ওল্ডহোম চাই না। পারিবারিক শিক্ষা, ধর্মীয় অনুশাসন এগুলোর দিকে নজর দেয়া উচিত। শিশুদের সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে পারিবারিক সুশিক্ষা সবচেয়ে বেশি জরুরি।

আইল্যান্ড সিকিউরিটিসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, বৃদ্ধাশ্রম সব সমস্যার সমাধান নয়। সমস্যার মূলে হাত দিতে হবে। পরিবার বাদ

 

দেয়া যাবে না। সামাজিক দায়িত্ব এড়ানো যাবে না। সালিশি প্রথা আবারও প্রবর্তন করা দরকার। মানুষকে মোটিভেট করতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। চট্টগ্রামে প্রবীণ, নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে।

 

ওমেন চেম্বার চট্টগ্রামের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট খালেদা আওয়াল বলেন, চট্টগ্রামের মেয়েরা ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, এটি পরিবারের অন্য সদস্যরা প্রত্যাশা করেন না। আবার অনেক মেয়ে হিসাবের বিষয়টা খুব একটা বুঝে না। অনেকে ট্রেনিং নিয়ে আর কিছু করে না। টাকা পায় না বলে। ঢাকায় অনেক সুযোগ থাকলেও বিনিয়োগের ক্ষেত্রটা চট্টগ্রামে খুবই সীমাবদ্ধ।

 

খেলাঘরের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ম-লীর সদস্য রথীন সেন বলেন, শিশুবান্ধব পরিবেশ এবং বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ অপরিহার্য। তাহলে আমরা শিশুবান্ধব চট্টগ্রাম গড়তে পারব। সুস্থ সবল শিশু পাব। সুশিক্ষায়, সুস্থ মননে, বিজ্ঞানমনস্কতায় শিশুদের গড়ে তুলতে পারব। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সরকার এবং বিত্তবান-সবাইকে এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে।

 

বেওয়ারিশ মানবসেবা বৃদ্ধাশ্রমের উপদেষ্টা আমিনুল হক বাবু বলেন, অনেকে বলেন আমরা বৃদ্ধাশ্রম চাই না। এটি না থাকলে শেষ বয়সে অবহেলার শিকার ব্যক্তিরা কোথায় যাবেন? চট্টগ্রামে এমন ঘটনাও আছে, পরিবারের তিন ছেলে ধাক্কাধাক্কি করেছে- মাকে কে কী দেবে, কে ভাত খাওয়াবে, কে ওষুধ খরচ দেবে- এসব নিয়ে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রবীণদের সুরক্ষা নিশ্চিত জরুরি।

 

দৈনিক পূর্বকোণের সিটি এডিটর নওশের আলী খান বলেন, চট্টগ্রামকে আরও নারী, প্রবীণ ও শিশুবান্ধব করতে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে- কী কী করা যায়, নীতিনির্ধারকদের কাছে সেগুলো তুলে ধরতে কাজ করছে পূর্বকোণ। কে শুনলো, কে শুনলো না- সেটা আমরা দেখি না। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা বলে যাব। এতে কাজ হচ্ছে না তা নয়। কিছু কিছু কাজ হচ্ছে।

 

প্রধান প্রতিবেদক সাইফুল আলম বলেন, চট্টগ্রামে নারীর নিরাপত্তা, ব্যবসায় ভূমিকা, গার্মেন্টসে অবদান নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অন্য খাতে নারীদের অবস্থা কেমন তা তুলে ধরতে চাই। চট্টগ্রাম কতটা শিশুবান্ধব। আজকে যে শিশু বেড়ে উঠছে তারা কতটা বিনোদন নিয়ে বেড়ে উঠছে। মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠছে কিনা। এ বিষয়টিও তুলে আনার চেষ্টা করছি।

 

তিনি বলেন, প্রত্যেক মানুষের প্রত্যাশা থাকে শেষ বয়সে পরিবারের সাথে থেকে চিরবিদায় নেয়ার। অনেকের টাকা আছে কিন্তু যত্ন নেয়ার মত কেউ নেই। এই যে একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেছে। শুধু সমস্যার কথা না বলে সমাধানের উপায়, রাষ্ট্রের দায় কী, নাগরিকদের দায় কী এসব দিকগুলো তুলে আনতে পারলে আমাদের আয়োজন ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করি।

 

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব প্রফেসর আব্দুল আলীমের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও মতামত দেন চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী জিন্নাত আমিন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট