কক্সবাজারের মহেশখালীতে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নথি জালিয়াতির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সাবেক জেলা ও দায়রা জজসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের জন্য আগামী ১ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান এই আদেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার ধার্য তারিখে অন্তর্বর্তী জামিনে থাকা পাঁচ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত তাদের অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ১ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন।
এই মামলার পাঁচ অভিযুক্ত হলেন- কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার, ওই আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ, আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল।
মামলার নথি পর্যালোচনায় জানা যায়, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি এলাকায় কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর আদালতে প্রথম মামলাটি দায়ের করেন। সেই মামলায় কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন।
তবে, তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার মামলার এক নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে নথিপত্র দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠান বলে অভিযোগ ওঠে। জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে বাদী কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী একই আদালতে জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে নথি জালিয়াতির অভিযোগে নতুন করে মামলা করেন।
ওই জালিয়াতি মামলার তদন্ত শেষে দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন ২০২৪ সালের ১ জুলাই আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তে নথি জালিয়াতির ঘটনায় সহযোগিতা করায় সাবেক জেলা প্রশাসক ও জেলা জজ ছাড়াও বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. জাফর আহমদকে আসামি করা হয়। এই মামলায় দুদকের কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রহিম ও কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম শাহ হাবিবুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি কক্সবাজারের বিশেষ জজ আদালতে জালিয়াতির বিষয়ে দুদকের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয় এবং ২৩ জানুয়ারি আদালত ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অভিযুক্ত পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে তারা আদালতে হাজির হয়ে অন্তর্বর্তী জামিন পান। সম্প্রতি মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারের জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে। উচ্চপদস্থ সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
পূর্বকোণ/এরফান/জেইউ/পারভেজ