চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে ডাকাত সন্দেহে বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যা!, আহত ১২

মিরসরাই সংবাদদাতা

১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৮:৫২ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ডাকাত সন্দেহে বিএনপি নেতা রফিক উদ্দিনকে (৪৫) হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

তিনি উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

রফিক উদ্দিন সাহেরখালী ইউনিয়নের মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ১২ জন।

শনিবার (৩১ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টায় মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল জোন-২ এসকিউ ইলেক্ট্র্যিাল লিমিটেড কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিএনপি নেতাকর্মীরা গিয়ে কারখানার ভেতর থেকে নিহত বিএনপি নেতা রফিক উদ্দিনের লাশ ও আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এতে আহতরা হলেন- সাজ্জাদ হোসেন (২১), নুরুল করিম (২৮), সাইদুল (২২), আবদুর রহিম (২৬), নুরুজ্জামান (২৭), আবু তালিব (৩২), শহীদুল ইসলাম (৪৫), জহির (১৭), শহিদুল ইসলাম (২৮) ও আকবর হোসেন রনি (২২)। সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়ন সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি ছিলো বিএনপি সাহেরখালী ইউনিয়নের। আমরা প্যাকেট করার সময় রাতে বিএনপি নেতা রফিক উদ্দিনের নম্বরে একজন কল দিয়ে জানান সাহেরখালী ইউনিয়নের স্লুইচ গেট এলাকায় ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে- নিবে কি না। পরবর্তীতে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ওখানে যান। ওখান থেকে ফেরার সময় অর্থনৈতিক অঞ্চলের এসকিউ ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড কারখানার সামনে এলে তাদের ডাকাত আখ্যা দিয়ে ঘিরে ফেলেন কারখানার লোকজন ও স্থানীয়রা। এ সময় রফিক মেম্বারসহ তার সাথে থাকা নেতাকর্মীদের গণধোলাই দেয় তারা।

তিনি আরও বলেন, আমি রাতে রফিক মেম্বারের নম্বরে ফোন দিলে এটি অপরিচিত একব্যক্তি রিসিভ করেন। আমি রফিক মেম্বারের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রফিক জঙ্গলে আছেন। তুমি কে; বলে কল কেটে দেন। পরে আমি বিষয়টি মিরসরাইয়ে থাকা সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে জানাই। সেনাবাহিনী রাতে না যাওয়াতে আজ (রবিবার) সকাল ৮টায় আবার কল দিই। প্রশাসনের সহযোগিতা না পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা দুপুর সাড়ে ১২টায় এসকিউ ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড কারখানার ভেতর যায়। এ সময় রফিক উদ্দিনকে হাত-পা, চোখ বাঁধা মৃত অবস্থায় এবং অন্যান্য নেতাকর্মীদেরও গুরুতর জখম অবস্থায় পাই। এরপর তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। রফিকসহ আহতদেরকে নির্মমভাবে প্রহার করা হয়েছে। তাদের বহনকারী তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

এসকিউ ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড কারখানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, শনিবার রাত দেড়টায় দূরের একটি মৎস্য প্রকল্পে হানা দিয়ে ফেরার পথে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ১৪-১৫ জনের একটি ডাকাত দল আমাদের কারখানায় ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাকর্মীরা এলার্ম বাজায়। এতে আশপাশের কারখানার লোকজন ও রাতে খালে মাছ ধরতে আসা মানুষ তাদের ধাওয়া করে গণধোলাই দেয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা ডাকাতদের ব্যবহার করা তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জ্বালিয়ে দেয়। পরবর্তীতে আহত লোকজনকে উদ্ধার করে আমরা কারখানার ভেতরে রাখি। রবিবার সকাল সাড়ে ১২টার দিকে আহত ব্যক্তিদের স্বজনরা কারখানায় ঢুকে তাদের নিয়ে যায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেন।

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রফিক উদ্দিন বিএনপির দুর্দিনের নিবেদিত নেতা। তাকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডাকাত আখ্যা দিয়ে হত্যা করেছে। আহত করেছে দলীয় অনেক নেতাকর্মীকেও। হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সিফাত সুলতানা জানান, রবিবার দুপুর দেড়টায় রফিক উদ্দিন নামে একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের জখম রয়েছে। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় আরো ১০ জনকে আনা হয়। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি কারখানায় মারামারি ঘটনা শুনেছি। রফিক উদ্দিন নামে নিহত একজনের লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

এদিকে, রবিবার দুপুরে কারখানা এলাকা পরিদর্শন করেন মিরসরাই সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার লেফট্যানেন্ট কর্নেল আল মামুন, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মেজর আমিন।

লেফট্যানেন্ট কর্নেল আল মামুন বলেন, এসকিউ কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছি আমরা।

পূর্বকোণ/মিঠু/জেইউ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট