চট্টগ্রাম রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

সর্বশেষ:

আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস আজ : দ্রুত ছোট হচ্ছে পরিবার
ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস আজ : দ্রুত ছোট হচ্ছে পরিবার

আরাফাত বিন হাসান

১৫ মে, ২০২৫ | ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে দ্রুতই ছোট হচ্ছে পরিবার। গেল ৪০ বছরে জেলায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমেছে পরিবারের আকার। এরমধ্যে সর্বশেষ ১১ বছরে পরিবারের আকার কমেছে ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে গড়ে প্রতিটি পরিবারে সদস্য সংখ্যা ছিল ৫ দশমিক ৯৪ জন। ৪০ বছরের ব্যবধানে তা কমে নেমেছে ৪ দশমিক ২৪ জনে।

 

২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনার চট্টগ্রাম জেলা প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য বলছে, ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের ব্যবধানে গড়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা কমেছে ০ দশমিক ০৭ জন। অর্থাৎ আশির দশকে জেলায় পরিবারের আকার কমেছে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ। পরবর্তীতে ২০০১ সালের শুমারিতে ০ দশমিক ৫২ জন কমে পরিবারের গড় সদস্য দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৫ জনে। এই সময়ে পরিবারের আকার কমেছে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পরের দশ বছরে পরিবারের আকার কমেছে ৮ দশমিক ০৩ শতাংশ বা ০ দশমিক ৪৩ জন।

 

সর্বশেষ ২০২২ সালের শুমারিতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ দশমিক ২৪ জনে। অর্থাৎ এর আগের ১১ বছরে পরিবারের আয়তন কমেছে ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, শহর ও গ্রাম মিলে চট্টগ্রামে মোট পরিবার রয়েছে ২০ লাখ ৮০ হাজার ৩৯৪টি। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ পরিবারই চার সদস্যের। জেলায় এই আকারের পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৫২ হাজার ১১৫ টি। অন্যদিকে কেবল এক সদস্যের পরিবার রয়েছে ৭৭ হাজার ৩০১ টি। আর ১০ জনের অধিক সদস্যের পরিবার রয়েছে ২৫ হাজার ২৯৫ টি।

 

চট্টগ্রামে সবচেয়ে কম রয়েছে ১০ সদস্যের পরিবার। জেলার মোট পরিবারের মধ্যে এই আকারের পরিবারের সংখ্যা কেবল ১৫ হাজার ৬২৫ টি বা ০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর বাইরে চট্টগ্রামে ২ সদস্যের পরিবার দুই লাখ ৫১ হাজার ৫৬৫ টি, তিন সদস্যের পরিবারের সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৫৭ টি, পাঁচ সদস্যের পরিবার ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪১ টি, ছয় সদস্যের পরিবার ১ লাখ ৯০ হাজার ৬৪০ টি, সাত সদস্যের পরিবার ৮৭ হাজার ৯৭৮ টি, আট সদস্যের পরিবার ৪৪ হাজার ৯৪৩ টি এবং ৯ সদস্যের পরিবারের সংখ্যা ২৪ হাজার ৯৩৪ টি।

 

জনশুমারির এই তথ্য বলছে, গেল ৪০ বছরের মধ্যে সর্বশেষ দশকেই সবচেয়ে বেশি কমেছে পরিবারের আকার। ভাঙন বেড়েছে বড় পরিবারে। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে দ্রুতই ছোট হচ্ছে পরিবার। পরিবারের আকার ছোট হওয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। তবে অবশ্যম্ভাবী এই পরিবর্তন মেনে নিয়ে মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে এখন পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কর্মমুখী হচ্ছে। এতে নারীরা পরিবার ছোট রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। অধিক সন্তান জন্মদানে অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। এতে ছোট পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে, এটা ইতিবাচকই বলা চলে।

 

অনেকটা একই কথা বলেন প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এ.এফ ইমাম আলি। তিনি বলেন, পারিবারিক অর্থনৈতিক কাঠানো কৃষিনির্ভর থেকে শিল্পনির্ভর হয়ে উঠছে। এতে ছোট পরিবার বাড়ছে। আবার শিক্ষার হার বৃদ্ধির কারণে মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। এই পরিবর্তনটা অবশ্যম্ভাবী, তবে এক্ষেত্রে মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যের প্রতি সবার যত্নশীল হতে হবে।

 

আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস আজ:

১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় প্রতিবছর ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পারিবারিক বন্ধন এবং পরিবারে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই দিবসটি ঘোষণা করে সংস্থাটি। এবারও সারা বিশ্বের মতো দেশেও নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে সরকারি- বেসরকারি নানা সংস্থা। দিবসটি উদযাপনে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘টেকসই উন্নয়নে পরিবার কেন্দ্রিক নীতি।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট