চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫

সর্ববৃহৎ সমাবর্তন : বর্ণিল সাজে প্রস্তুত চবি ক্যাম্পাস
পঞ্চম সমাবর্তন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সজ্জিত রাতের চবি ক্যাম্পাস

সর্ববৃহৎ সমাবর্তন : বর্ণিল সাজে প্রস্তুত চবি ক্যাম্পাস

আহমেদ জুনাইদ, চবি

১২ মে, ২০২৫ | ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ ৯ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) আয়োজন করতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাক্সিক্ষত সমাবর্তন। প্রতিবছর হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে মাত্র ৪টি সমাবর্তন। অনেকদিন পর হওয়ায় এবারের সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। পঞ্চম এই সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ২২ হাজার ৫৬০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২২ জন পিএইচডি ও ১৭ জন এমফিল ডিগ্রিধারী রয়েছেন।

 

অনুষদভিত্তিক অংশগ্রহণের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ (৪,৯৮৭ জন), এরপর ব্যবসায় প্রশাসন (৪,৫৯৬ জন), সমাজবিজ্ঞান (৪,১৫৮ জন), এবং বিজ্ঞান অনুষদ (২,৭৬৭ জন)। আগামী ১৪ মে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান।

 

সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ও চবির সাবেক শিক্ষক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। পাশাপাশি ইউজিসির চেয়ারম্যান, শিক্ষা উপদেষ্টাসহ আরও উপদেষ্টা অংশগ্রহণ করবেন। এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার।

 

অংশগ্রহণকারীদের যা জানা প্রয়োজন: সমাবর্তী শিক্ষার্থীরা ১২ মে থেকে গাউন ও টুপি নিজস্ব বিভাগ থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। সমাবর্তনের দিন সকাল ৭টা থেকেও সংগ্রহ করতে পারবেন। অনুষ্ঠানের পরপরই গাউন জমা দিয়ে তারা সনদ ও উপহার সামগ্রী গ্রহণ করবেন। তাছাড়া, সমাবর্তনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ২৬ হাজার উপহার সামগ্রী। প্রত্যেকে পাবেন একটি জুটের ব্যাগ, কোর্ট পিন, কলম ও মোবাইল ওয়ালেট।

 

সমাবর্তনের দিন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। শিক্ষার্থীদের সিঙ্গেল লাইনে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করতে হবে এবং দুপুর ১ টার পর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অতিথি বাদে কোন ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ফটকে থাকবে পার্কিং ও বাস ট্রান্সফারের ব্যবস্থা। যাতায়াতের জন্য শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ছাড়বে ১০০টি বিশেষ বাস এবং চলবে ৪টি বিশেষ শাটল ট্রেন। ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য থাকবে শাটল বাস সার্ভিস।

 

অনুষ্ঠানটি শুরু হবে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে, অতিথিদের আসন গ্রহণের মাধ্যমে। এরপর ১টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে সমাবর্তন শোভাযাত্রা। বিকেল ২টা থেকে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে এবং ২টা ৫ মিনিটে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হবে। ২টা ১৫ মিনিটে সমাবর্তনের সভাপতি ও ভাইস-চ্যান্সেলর সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। পরবর্তী সময়ে, ২টা ১৬ মিনিটে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন।

 

এরপর, বিকেল ২টা ২০ মিনিটে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে এবং ২টা ৩০ মিনিটে উপাচার্য বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করবেন। ৩টা থেকে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন এবং এরপর যথাক্রমে ইউজিসি চেয়ারম্যান (৩টা ৫ মিনিট), শিক্ষা উপদেষ্টা (৩টা ১০ মিনিট) এবং সমাবর্তন বক্তা (৩টা ১৫ মিনিট) বক্তব্য প্রদান করবেন।

 

বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। এরপর ৩টা ৫০ মিনিটে সভাপতি তার বক্তব্য প্রদান করে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন। অনুষ্ঠান শেষ হবে ৪টা থেকে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও ৪টা ১ মিনিটে সমাবর্তন বক্তার প্রস্থান করার মাধ্যমে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি: সমাবর্তন উপলক্ষে খরচ হবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ৬ কোটি টাকা এসেছে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি থেকে। বাকি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি ও স্পন্সরদের থেকে নেওয়া হবে।

 

সমাবর্তন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। যারা মূল অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না, তাদের জন্য ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার, জারুলতলা, সায়েন্স ফ্যাকাল্টি চত্বরসহ পাঁচটি স্থানে থাকবে এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় সাজছে নতুন সাজে। পুরো ক্যাম্পাসকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। পরিচ্ছন্নতার আওতায় আনা হয়েছে রাস্তাঘাট, ক্যান্টিন, হল ও ফ্যাকাল্টি। বিভিন্ন আলপনা ও রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে সবকিছু।

 

সমাবর্তন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী পূর্বকোণকে জানান, একক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি দেশের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। সবাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে এতে অংশ নিবেন, এটাই প্রত্যাশা। এছাড়া জরুরি নির্দেশনাগুলা সমাবর্তনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাবেন সমাবর্তী শিক্ষার্থীরা।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ৫৮ বছরের ইতিহাসে মাত্র চারটি সমাবর্তন হয়েছে। এবার আমরা ইতিহাস গড়তে যাচ্ছি। একই সমাবেশস্থলে এতো শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে সমাবর্তন, বিশ্বের ইতিহাসে এটাই হবে প্রথম।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট