ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান জানান দিতে বেশ তৎপর হয়ে ওঠেছেন। দিনরাত ঘুরে বেড়াচ্ছেন মাঠে ময়দানে। দলীয় কর্মসূচি ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। যদিও চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে অনেক আগেই। বর্তমানে দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে বেশ তৎপর।
এদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী। এ দুই সিনিয়র নেতা স্ব-স্ব আসনে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। সেখানে অন্য কোন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। তবে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে এবার বিএনপিকে বেশ বেগ পেতে হবে। এ আসনের শক্তিশালী প্রার্থী দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ইন্তেকালের পর একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন তার দুই সন্তানও।
অপরদিকে বিএনপির আরেক শক্তিশালী প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুর পর তার পুত্র সাঈদ আল নোমানও মাঠে রয়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে দুটি করে আসনে। সব মিলে এবার প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপিকে সংসদ নির্বাচনের আগেই বড় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে- এমনটি মনে করেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই): এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান। তিনি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে ছিলেন। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আরো রয়েছেন উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী, ক্লিপটন গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রফেসর এমডি কামাল উদ্দিন চৌধুরীর ছোট ভাই বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও বড়তাকিয়া গ্রুপের কর্ণধার মনিরুল ইসলাম ইউসুফ।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি): এ আসনে সাবেক মনোনয়ন প্রত্যাশী পিজিআর প্রধান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মো. আজিম উল্লাহ বাহার। তিনি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে ছিলেন। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আরো রয়েছেন, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়জী, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছালাউদ্দিন ও সরোয়ার আলমগীর। তাছাড়া এ আসনে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুর কারণে এ আসনে পরিবারের কাউকে প্রার্থী করতে পারে দলটি।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ): এ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুল রহমান ভূঁইয়া মিল্টন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তরিকুল আলম তেনজিন, তবিউল আলম, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট আবু তাহের।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড): এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী দলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ): এ আসনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক ও সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান): এ আসনে নাম শোনা যাচ্ছে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে ছিলেন মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সিকদার।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া): এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম খান, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু আহমেদ হাসনাত।
চট্টগ্রাম- ৮ (চান্দগাঁও, বোয়ালখালী ও পাঁচলাইশ আংশিক): এ আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া): এ আসনে চসিক মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুল আলম।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী): বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম আবদুল্লাহ আল নোমানের পুত্র তরুণ রাজনীতিবিদ সাঈদ আল নোমান।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট): এ আসনে একক প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া): এ আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও পটিয়া উপজেলা বিএনপিরআহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য সৈয়দ সাদাত আহমেদ এবং চবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দীন সালাম মিঠু।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী): এ আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মামুন মিয়া এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ আলী আব্বাস।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক): চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম এবং ২০০৮ সালের বিএনপির প্রার্থী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এডভোকেট মিজানুল হক চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া): এ আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল হোসেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান এবং লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী): সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী।
পূর্বকোণ/ইব