১৯৭৮ এর দিকে আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর প্যাথলজিতে ছিলাম। এক বছর পর এর দায়িত্ব পাই। সে সময় সন্দ্বীপের এক কর্নেল বা ব্রিগেডিয়ার পরিচালক ছিলেন। গিয়ে বললাম, ‘আজ থেকে কোন প্যাথলজি টেস্ট বাইরে যাবে না। নোটিশ দিয়ে এটা জানিয়ে দেন।’ সেভাবে তিনি নোটিফাই করেন, কোন প্যাথলজি বাইরে যেতে পারবে না। এরপরও দুয়েকজন রোগীকে বাইরে পাঠানো হতো। তাদের ডেকে বলে দিলাম, ‘যদি বাইরে রোগী পাঠাও তাহলে গণপিটুনি খাবে।’
তখন এত বেশি টেস্ট হতো না। তারা জানিয়েছিল, সুগার, ইউরিন, বিলিরুবিন- এই টেস্টগুলো বাইরে করাতে হয়। প্রিন্সিপালকে বললাম মেডিকেলেই যেন টেস্টগুলো করার ব্যবস্থা করা হয়। তখনকার সময়ে টেস্টগুলো মেডিকেল কলেজে হতো, ইনডোর প্যাথলজিতে হতো না। প্রিন্সিপালকে বলার পর তিনি ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর আমি থাকাকালীন আর বাইরে টেস্ট করাতে দেইনি। বাইরে পাঠানোর খবর পেলেই ডাক্তারকে ধরতাম। আমার মনে হয় এবার একটা নোটিশ দিতে হবে। যাতে উল্লেখ থাকবে মেডিকেল কলেজের কোন কেস বাইরে পাঠানো যাবে না। এটা বলার কারণ হচ্ছে, অনেক রোগীর অভিযোগ মেডিকেলে এমন অনেক টেস্ট দেয় যেগুলো বাইরে থেকে করা লাগে। এরকম অনেক উদাহরণ আছে।
জনশক্তি ছাড়া কাজ করা কঠিন। অভিযোগ আছে হাসপাতালে রোগী পাঠালেই ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত সকলেই টাকা চায়। ১০-২০ টাকা না দিলে তারা কাজ করে না। বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার সমস্যাগুলোর সমাধান হবে না। অর্থাৎ, এখন আন্দোলন করতে হবে। মেডিকেল কলেজে যিনি পরিচালক থাকবেন, তাকে বদলির দরকার নেই। তাকে আমৃত্যু ইচ্ছা করলে রেখে দেয়া যায়। সবধরনের সুযোগ সুবিধাসহ সমস্ত দায়িত্ব তাকে দিতে হবে। বাজেট আসবে এখানে। মেডিকেলের সবকিছু মেডিকেলই করবে। এগুলো অবশ্য আমরা রাজনৈতিক প্রোগ্রামে নিয়ে আসবো।
চট্টগ্রামে বোন ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয় এখন জানলাম। পার্কভিউ নিয়ে আমাদের এক মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার খুব এপ্রেশিয়েট করলেন। যার একটু সামর্থ্য আছে সে বাধ্য না হলে সরকারি মেডিকেলে যেতে চায় না। নিম্নমধ্যবিত্ত পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে যায়। আর মধ্যবিত্তরা বেসরকারি হাসপাতালে যায় জমিজমা বিক্রি করে। আমি জীবনে একবারই গিয়েছিলাম মেডিকেল সেন্টারে। সেখানে ১০ হাজার টাকা বাকি রেখে পালিয়ে এসেছিলাম। দেখা হলেই তাদেরকে বলি, ‘আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা পাবা।’
সবকিছুর ভিত্তিতে আন্দোলন রচিত হবে। আজকে অনেক তথ্য পেলাম। সেগুলো আমাদের সংগঠনের কাছে পেশ করবো। আসলে আন্দোলন ছাড়া কিছু হবে না। কেউ একজন বললেন এমপিদের বলতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিদের কথার ন্যূনতম গুরুত্ব দেন না। প্রাইভেট হাসপাতাল নিয়ে যে আন্দোলন হয়েছিল, এটা আসলে নেগোশিয়েট করছিলেন ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত।
এজন্য রাস্তায় আন্দোলন করা ছাড়া অনেকগুলো দাবি আদায় হবে না। রাস্তায় আন্দোলন করলে ঢাকায় করতে হবে। সেখান থেকে একজনকে ধরতে হবে। এটা হলো ফ্যাক্ট। কারণ দু’বার চক্রান্ত হয়েছে। একবার হলো মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হবে না, আবার চমেক হাসপাতালকে মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হোক। সেটাও বাতিল হয়েছে।
চমেক হাসপাতালে পরিচালক সমস্যাগুলো বিস্তারিত জানালে আমরা এসব দাবি প্রচারে আনবো। এটাতে পরিচালকের রেফারেন্স যাবে না। এসব দাবি জনসমক্ষে তুলে ধরবো। এই তথ্যগুলো দিয়ে আমরা জনগণকে মোভিলাইজ করতে পারবো। আর পূর্বকোণের কাজ হলো- নিউজগুলো বড় বড় করে কাভার করতে হবে। মিডিয়া যদি সহায়তা করে তাহলে এক বছরের মধ্যে অনেক দাবি রাস্তা থেকে আদায় করে নিতে পারবো। রাস্তায় আন্দোলন ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কানে কথা ঢুকানোর কেউ নেই।
পূর্বকোণ/পিআর