চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

বন্দরের ১০৪ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রকল্প

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, কাজ হলো মাত্র ৪৭%

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ১০৪টি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। এরইমধ্যে শেষ হয়ে গেছে প্রকল্পের মেয়াদ। কিন্তু সংগ্রহ করা যায়নি সব যন্ত্রপাতি। প্রকল্পের পুরো সময় ব্যয় করেও যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজ হয়েছে মাত্র ৪৭ শতাংশ।

 

অন্যদিকে, বাকি ৫৩ শতাংশ কাজ শেষ করতে পুনরায় সময় ও খরচ বাড়াতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালে ‘চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড ও টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। তবে এবার আরও আড়াই বছর সময় ও ২২১ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশোধিত প্রস্তাব পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ১ হাজার ১৩৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং মেয়াদ হবে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

 

এদিকে, প্রকল্পের অগ্রগতি জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) ও প্রকল্প পরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে ৪৭ শতাংশ যন্ত্রপাতি চলে এসেছে। বাকি কাজ সম্পন্ন করতে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়াতে হবে। সে কারণেই মূলত প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন প্রয়োজন। তবে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ, এলসি ওপেনিং বাকি ১০ শতাংশ। বৈশ্বিক নানা জটিলতার কারণে কাজ বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া ডলারের মূল্য বাড়ার কারণেও প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।

 

সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে কার্গো-কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্টের পর্যাপ্ততা ৭০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত হবে। বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) গ্যান্ট্রি ক্রেনের চাহিদা শতভাগ পূরণ হবে এবং জাহাজের ওয়েটিং টাইম আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

 

এ প্রকল্পে দুটি ১০০ টনের মোবাইল ক্রেন, দুটি ৫০ টনের মোবাইল ক্রেন, চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন, ছয়টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন, দুটি কনটেইনার মুভার, চারটি ভেরিয়েবল রিচ ট্রাক, চারটি রিচ স্টেকার, পাঁচটি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনা হবে। ৬টি দুই হাই ব্লাডেল ক্যারিয়ার, ৬টি চার হাই ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, দুটি লগ হ্যান্ডলার টেকার, চারটি চার হাই ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, দুটি লো-বেড ট্রেইলার, দুটি ছেডি ট্রাক্টর, ১২টি ২০ টনের মোবাইল ক্রেন, ছয়টি চার হাই ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, পাঁচটি চার হাই ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, একটি মেটারিয়াল-মাল্টি হ্যান্ডলার এবং ২৩টি ১০ টনের মোবাইল ক্রেন সংগ্রহ করা হবে।

 

মন্ত্রণালয়সূত্র জানায়, প্রকল্পের বিভিন্ন আইটেমের ব্যয় বেড়েছে। এরমধ্যে সিডি ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ৮ কোটি ৭৭ লাখ, প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে ৩ কোটি ৫০ লাখ এবং অন্য ব্যয় (এলসি চার্জ, বিমা প্রিমিয়াম, ইন্সপেকশন বিল ইত্যাদি) বাবদ ৩০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া যন্ত্রপাতি সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় এলসি চার্জ, বিমা প্রিমিয়াম, ইন্সপেকশন এজেন্সির বিল ইত্যাদি বাবদ অন্য ব্যয় এর আগে অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ে অন্তর্ভুক্ত নেই। ফলে এসব ব্যয় বাবদ যন্ত্রপাতির চুক্তিমূল্যের সম্ভাব্য ক্রয়মূল্যের আনুমানিক ৩ শতাংশ থোক রাখা যেতে পারে।

 

মন্ত্রণালয়সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পটি শুরু হয় কোভিড-১৯ সময়ের মধ্যে। পরবর্তীতে শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এমন বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিতে। চরম ডলার সংকটের কারণে যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী বরাবর এলসি ওপেন করতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে দেরি হচ্ছে সাত থেকে আট মাস। এলসি ওপেন নিশ্চিত হলে সরবরাহকারী-প্রস্তুতকারীরা ইক্যুইপমেন্ট প্রস্তুত প্রক্রিয়া শুরু করে। কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ সৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন মালামাল-কম্পোনেন্ট প্রস্তুতকারী ভেন্ডর যথাসময়ে সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। ফলে কার্গো-কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট প্রস্তুতকারীরা যন্ত্রপাতিগুলো প্রস্তুত করতেও অনেক সময় নিচ্ছে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট