সীতাকুণ্ডে বিগত কয়েক বছর ধরেই সূর্যমুখী চাষ ক্রমাগত বাড়ছে। এই ফুল থেকে পাওয়া তেল উৎপাদনে লাভবান হবার পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুল দেখতে সব শ্রেণি পেশার মানুষের যে আগ্রহ তাতে উৎসাহিত হয়ে অনেক সৌখিন কৃষক সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, কৃষকদের এ আগ্রহে চাষাবাদে আরো বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। নির্দ্বিধায় সে কথাই জানালেন কৃষি অফিসাররা।
উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে সূর্যমুখী চাষ বাড়ছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে কিছু কিছু সৌখিন কৃষক বিগত কয়েক বছর ধরে এখানে সূর্যমুখী চাষে যুক্ত হওয়ায় এটি উপজেলার কৃষির সাফল্যে নতুন পালক যোগ করেছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে এবার সীতাকুণ্ড উপজেলার ২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন ১৪ জন কৃষক। তাদের ক্ষেতে ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। এতে তারা লাভবান হবেন আশা করলেও চৈত্রের দাবদাহে পানি সংকট তীব্র হওয়ায় কোথাও কোথাও ফলন কম হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ও বারৈয়াঢালা এলাকায় সূর্যমুখী ক্ষেত পরিদর্শনকালে কথা হয় বেশ কয়েকজন সৌখিন কৃষকের সাথে। তাদের মধ্যে অন্যতম বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সৌখিন কৃষক ও রাজনীতিবিদ ডা. কমল কদর জানান, এবার তিনি ১২ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। এ জমি চাষের জন্য বীজ, সার, ফসফেট ও কীটনাশক দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
স্থানীয় ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পিপাস কান্তি চৌধুরীও সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে সঠিক উপায়ে চাষাবাদে দারুণ সহযোগিতা করেছেন। এই জমি চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকার মতো। ইতিমধ্যে ফুলগুলো বীজে পরিণত হয়েছে। প্রতি তিন কেজি বীজ থেকে এক কেজি তেল উৎপাদন হয়। এই হিসেবে ১৫ হাজার টাকার মতো তেল পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
তবে কত টাকা আয় হলো তার চেয়েও তিনি বেশি আনন্দিত এ কারণে যে, যখন ক্ষেতে সূর্যমুখী ফুটেছে তখন চারপাশের বহু গ্রামের মানুষ এই ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। অনেকে এসে এই ফুলের সাথে ছবি তুলেছেন আনন্দে।
প্রায় একই কথা বলেন, বাঁশবাড়িয়া কোট্টাবাজারের আরেক সফল ও সৌখিন কৃষক ইব্রাহিম হোসেন টিপু। তিনি বলেন, ২৪ শতক জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতা পেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছেন। জমিতে ফুল আসার পর থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে এসেছেন এই ফুল দেখতে ও ফুলের সাথে ছবি তুলতে। এই জমিতে তার মোট খরচ প্রায় ১৬ হাজার টাকা। এখন ফুলগুলো বীজে পরিণত হচ্ছে। তবে পানি সংকটে এই জমির ফুলগুলো আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। পানি পেলে আরো অনেক বড় হতো গাছ ও ফুল। তবুও তিনি খরচের দ্বিগুনের চেয়ে বেশি টাকার তেল পাবেন বলে আশাবাদী।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লা বলেন, আসলে সূর্যমুখী ফুল চাষ দিন দিন বাড়ছে। আমরা এই ফুল চাষে উৎসাহী করতে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করছি। এতে অনেক সৌখিন কৃষক এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। ফলে চাষাবাদ বিগত কয়েক বছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তবে পানি সংকটের জন্য কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেনে নিয়ে তিনি বলেন, এটি প্রাকৃতিক বিষয় হলেও আমরা স্যালো বা ডিপ কল স্থাপনের বিষয়ে কি করা যায় তা দেখছি।
পূর্বকোণ/ইব