চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

সর্বশেষ:

ইরান-ইসরায়েল

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত

পারমাণবিক সংঘর্ষের ঝুঁকি কি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে?

ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী, সম্পাদক

১৭ জুন, ২০২৫ | ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

নিচের প্রতিবেদনটি একটি কাল্পনিক কিন্তু বাস্তবসম্মত কৌশলগত মূল্যায়নভিত্তিক বিশ্লেষণ, যা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ইরান-ইসরায়েল সংকটের সম্ভাব্য গতিপথ ও পরিণতি ব্যাখ্যা করে। এটি কোন সরকারি দলিল নয়; বরং উন্মুক্ত তথ্য, ইতিহাস ও ভূরাজনৈতিক প্রবণতার উপর ভিত্তি করে তৈরি একটি বিশ্লেষণাত্মক অগ্রিম আভাস। প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য জনসচেতনতা ও কৌশলগত আলোচনার ক্ষেত্র প্রসারিত করা।

সংক্ষিপ্ত সারমর্ম (Executive Summary):
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা ইরানের ওপর পূর্বের ছায়াযুদ্ধের ধরন অতিক্রম করে এখন সরাসরি সামরিক সংঘাতে পরিণত হয়েছে। পারমাণবিক স্থাপনা, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সামরিক নেতৃত্বের ওপর আক্রমণ নির্দেশ করে যে, এটি আর সীমাবদ্ধ (Containment) নয়, বরং সার্বিক ধ্বংসের (decapitation) প্রচেষ্টা।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, গোপন অস্ত্র বিক্রির বাজার এবং অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা বিবেচনায় অনুমান করা হচ্ছে- ইরানের শাসনব্যবস্থার সম্ভাব্য পতনের পরিস্থিতিতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে।
কৌশলগত পূর্বাভাস: ‘পিছনে ফেরার পথ নেই’- সংকটময় পতনপথ

মূল ধারণা: ইরান বর্তমান সংঘাতে আপসের সম্ভাবনা প্রদর্শন করছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদন, জ্বলানি অবকাঠামো এবং পারমাণবিক স্থাপনার ওপর হামলার ফলে ইরানি শাসকগোষ্ঠী একে অস্তিত্বের সংকট হিসেবে বিবেচনা করছে।
সম্ভাব্য ‘ট্রিগার’ পরিস্থিতি: বিদ্যুৎ ও জ্বলানি অবকাঠামোর ধারাবাহিক ধ্বংস আইআরজিসি (IRGC) নেতৃত্বের মৃত্যুর ফলে সামরিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়া দেশজুড়ে বিক্ষোভ, বিদ্যুৎ বিপর্যয় ও অসন্তোষ
ফলাফল: অন্তিম প্রতিরোধ নীতির সূচনা। দেশের রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। কিছু গোষ্ঠী স্বাধীনভাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

ইরানের পরমাণু সক্ষমতা কি ইতোমধ্যে আছে?
সমর্থনযোগ্য সূত্র:
১. সোভিয়েত-পরবর্তী বিশৃঙ্খলা (১৯৯১- ১৯৯৬):
ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তানে ফিসাইল পদার্থ ও যুদ্ধাস্ত্র চুরি হয়। ইরান এই সময়কালীন কালোবাজার থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করতে পারে।
২. এ.কিউ. খান নেটওয়ার্ক (১৯৯৮- ২০০৩):
ইরান পি১/পি২ সেন্ট্রিফিউজ ও সম্ভাব্য বোমা ডিজাইন সংগ্রহ করে। লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ইঙ্গিত দেয় যে, ইরানও একই অস্ত্র-প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছে।
৩. উত্তর কোরিয়ার সহযোগিতা:
ইরান-উত্তর কোরিয়া যৌথভাবে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। ইরানি পর্যবেক্ষকরা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন বলে সন্দেহ।

মূল মূল্যায়ন:
ইরানের কাছে ১ থেকে ৩টি ছোট আকারের কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে, যা তারা কেবল ‘চ‚ড়ান্ত অস্তিত্ব রক্ষার গ্যারান্টি’ হিসেবে গোপনে রেখেছে।
সম্ভাব্যতা: মাঝারি থেকে উচ্চ।

সম্ভাব্য যুদ্ধপথ: টাইমলাইন চিত্র
ধাপ-১ (১ম-২য় সপ্তাহ):
ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলা
ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা
তেল সরবরাহ ব্যাহত; বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি
কূটনৈতিক ব্যর্থ প্রচেষ্টা
ধাপ-২ (৩য়-৬ষ্ঠ সপ্তাহ):
ইরানে বৃহৎ পরিসরের ব্লকআউট
বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ, সহিংসতা, বিভক্ত
ওজএঈ; কেউ যুদ্ধ, কেউ পিছু হটার পক্ষে
‘ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে’- এমন খবর ছড়িয়ে পড়তে পারে
ধাপ-৩ (৬ষ্ঠ-১২তম সপ্তাহ):
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেয়
ইসরায়েল সম্ভাব্য বোমা-স্থানে আগাম হামলা চালায়
ইরান একটিতে ‘ডার্টি বোমা’ বা অফশোর বিস্ফোরণ ঘটায়
যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো যুক্ত হয়
শরণার্থী সংকট ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় শুরু

তিনটি সম্ভাব্য পথ: কোনটি বাস্তবসম্মত?
পথ বর্ণনা: সম্ভাবনা
ক) ক‚টনৈতিক বিরতি- জাতিসংঘ/চীন/গাল্ফ রাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি: সম্ভাবনা কম
খ) দীর্ঘস্থায়ী ছায়াযুদ্ধ – সরাসরি যুদ্ধ নয়, কিন্তু হামলা চলতে থাকবে: সম্ভাবনা মাঝারি
গ) সরকার পতন ও পারমাণবিক সঙ্কট- বিশৃঙ্খলা, অস্ত্রের অনির্দেশ্য ব্যবহার: সম্ভাবনা উচ্চ

কী করণীয়? (প্রতিরক্ষা কৌশল)
১. ফোর্ডোসহ গভীর পারমাণবিক স্থাপনায় নজরদারি
২. স্যাটেলাইট ও মানব গোয়েন্দা দিয়ে অস্ত্র স্থানান্তরে নজরে রাখা
৩. গাল্ফ অঞ্চলে জরুরি মানবিক ও জ্বলানির প্রস্তুতি
৪. সিরিয়া, ইরাক, লেবাননের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পরিস্থিতি নজরে রাখা
৫. ইরানি সামরিক বাহিনীর অ-আইআরজিসি অংশের সঙ্গে বিকল্প ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

চূড়ান্ত বার্তা: পরমাণু যুদ্ধের ছায়া বাস্তবতা পাচ্ছে
এটি আর কোন ছায়াযুদ্ধ নয়। এটি ইতিহাসের মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত।
যদি ইসরায়েল তার হামলা অব্যাহত রাখে অথবা ইরানের সরকার ভেঙে না পড়ে তবে ১৯৪৫ সালের পর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুদ্ধকালীন পরমাণু বিস্ফোরণ দেখা যেতে পারে এবং সেটি কোন রাষ্ট্রীয় নীতির মাধ্যমে নয়- বরং মরিয়া আত্মরক্ষার জন্য।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট