চট্টগ্রাম সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

ইলন মাস্কের পদত্যাগের নেপথ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধ ও ব্যবসায়িক স্বার্থ
ফাইল ছবি

ইলন মাস্কের পদত্যাগের নেপথ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধ ও ব্যবসায়িক স্বার্থ

মুহাম্মদ মোরশেদ আলম

৩০ মে, ২০২৫ | ১:৫৯ অপরাহ্ণ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন বাজেট বিল নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানানোর পর ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিশ্বখ্যাত উদ্যোক্তা মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া ওই অর্থ বিল নিয়ে সমালোচনার পরপরই তার পদত্যাগের ঘোষণা এল। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি সংক্ষেপে DOGE বা ডিওজিই’র প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন তিনি। মূলত মার্কিন প্রশাসনের ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়’ কমিয়ে বা বন্ধ করে আর্থিক সাশ্রয়ই ছিল এই দফতরের মূল কাজ। টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাস্ক ২৮ মে রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লিখেছেন, ‘বিশেষ সরকারি কর্মচারী হিসেবে আমার দায়িত্বের সময় শেষ হয়েছে। অপচয় কমানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। মাস্ক আরও যোগ করেন যে, ‘সরকারের দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে এবং এটি গোটা সরকারের কাজের পদ্ধতিতে পরিণত হবে।’

 

ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্কের নিয়োগ ছিল ১৩০ দিনের জন্য, যা ৩০ মে শেষ হওয়ার কথা। প্রশাসন জানিয়েছে, ডিওজিই-এর কাজ চলমান থকবে এবং সরকারকে আরও ছোট ও দক্ষ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। হোয়াইট হাউস বুধবার রাতেই মাস্ককে একজন বিশেষ সরকারি কর্মচারীর তালিকা থেকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তার দায়িত্ব ছাড়ার বিষয়টি বেশ তড়িঘড়ি করেই হচ্ছে এবং এটি বেশ অপ্রীতিকর ছিল। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানায় পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার আগে মাস্ক ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনাও করেননি। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা অভিযোগ করেছেন যে, প্রশাসনের অসন্তুষ্টির জন্য ডিওজিই-কে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে। সম্প্রতি টেসলার একটি বৈঠকে যোগ দিয়ে মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসন থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, তাঁর দফতরের নির্ধারিত কাজ শেষ। তাই মে মাসেই পদত্যাগ করতে চান তিনি। মাস্কের পদত্যাগ এমন এক সময় সামনে এলো, যখন তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ নামের নতুন বাজেট বিল নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন।

 

মাস্ক বলেছেন, ‘এই ব্যয়বহুল বিল দেখে আমি হতাশ। এতে ঘাটতি কমানোর বদলে বরং তা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা ডিওজিই দলের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে।’ তিনি বলেন, ‘একটা বিল বড় হতে পারে বা সুন্দর হতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয়—দুইটা একসাথে হওয়া কঠিন। এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত।’ মাস্কের দাবি, তিনি এবং তাঁর সহকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের অন্দরে থেকে এত দিন যে কাজ করে এসেছেন, সেগুলি ব্যর্থ হয়ে যাবে এই একটি বিলের কারণে।
এর মাধ্যমে মাস্ক এমন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নিজের ভিন্নমত প্রকাশ করলেন, যাকে ২০২৪ সালের পুনর্নির্বাচনে সাহায্য করেছিলেন তিনি। মাস্কের এমন মন্তব্য ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের ভেতরের চলমান উত্তেজনাকেই তুলে ধরেছে, যেখানে কর ও ব্যয় সংক্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে দলের বিভিন্ন অংশের বিরোধের কারণে বিলটি প্রতিনিধি পরিষদে পাস করতে বেগ পেতে হয়েছে।

 

মি. ট্রাম্প ওভাল অফিসে এক সংক্ষিপ্ত সাংবাদিক বৈঠকে বিলটি নিয়ে মাস্কের সমালোচনার জবাবে বলেন, ‘আমি এর কিছু দিক নিয়ে খুশি নই, তবে এর অন্যান্য দিক নিয়ে আমি রোমাঞ্চিত। তিনি আরও বলেন, বিলটিতে এখনও সংশোধনী আনা যেতে পারে। দেখা যাক কী হয়। এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।’

 

মাস্কের মন্তব্যে প্রশাসনের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য ক্ষুব্ধ হন। প্রশাসন থেকে এরপর বিভেদ দূর করতে রিপাবলিকান সিনেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্রাম্পের কর বিলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়। মাস্কের আপত্তি সত্ত্বেও ট্রাম্পের ওই বিলটি আইনে পরিণত করার কাজ এগোচ্ছে।রিপাবলিকানেরা শীঘ্রই বিল পাশ করানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

 

ট্রাম্পের ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ কি : গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে পাস হয়েছে ট্রাম্পের ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’। এই বিলে বহু ট্রিলিয়ন ডলারের কর ছাড় এবং প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির অঙ্গীকার রয়েছে। এ আইনটি ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের গুরুত্বপূর্ণ এক নীতি। এতে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে অর্থাৎ ২০১৭ সালে যেসব কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল, যেগুলো শিগগিরই শেষ হওয়ার পথে রয়েছে, সেগুলোর সময়সীমা বাড়িয়ে দেবে। একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বাড়ানো ও প্রেসিডেন্টের পরিকল্পিত বড় পরিমাণে বিদেশি নাগরিক তাড়ানোর জন্য অর্থ দেবে এই বিল। আইনটিতে সরকারের ঋণ সীমা চার ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ সরকার যে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ নিতে পারে, সেটির নতুন সীমা নির্ধারণ করেছে এটি। এখন এটি সিনেটে পাঠানো হবে। ওই বিলে ২০১৭ সালের কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্য সহায়তা ও মেডিকেইডের জন্য কর্মশর্ত আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া এতে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের বাজেট বৃদ্ধির মতো ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। কংগ্রেশনাল বাজেট অফিসের (সিবিও) পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিলটি পাস হলে ২০৩৪ সালের মধ্যে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে দিতে পারে।

 

কেন পদত্যাগ : মি. মাস্কের এই আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণার নেপথ্যে কোন কারণ, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। কারও কারও দাবি, ট্রাম্পের সঙ্গে প্রশাসনিক নানা বিষয়ে মতান্তরের জেরেই মাস্কের এই সিদ্ধান্ত। আবার মাস্কের ঘনিষ্ট মহলের একাংশের দাবি, এবার পুরোপুরি নিজের ব্যবসাতেই মনোনিবেশ করতে চাইছেন টেসলা এবং এক্স-এর কর্ণধার। মাস্ক এর আগে জানিয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অনুদান অনেক কমিয়ে দেবেন এবং অন্তত আরও পাঁচ বছর তিনি টেসলার নেতৃত্বে থাকবেন।

 

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের অন্যতম ব্যবসা টেসলার মুনাফায় ব্যাপক ধস নামে। কোম্পানিটির নতুন তথ্য অনুযায়ী, এই ত্রৈমাসিকে টেসলার মোট রাজস্ব ১৯৩০ কোটি ডলার। এটি গত বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ কম। লভ্যাংশ কমেছে ৭০ শতাংশ। বিশ্লেষকেরা ২১ হাজার ১০০ কোটি ডলার আয়ের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। ক্রেতা আকৃষ্ট করার চেষ্টায় কোম্পানি দাম কমিয়েছিল, তবে তারপরও প্রত্যাশিত আয় হয়নি। চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক ও টেসলার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে বলে কোম্পানিটি ইঙ্গিত দিয়েছে। ২০২১ সালে সর্বাধিক খ্যাতিমান ব্র্যান্ডের তালিকায় অষ্টম স্থানে থাকা টেসলা এখন নেমে গেছে ৯৫তম স্থানে।

 

টেসলার শেয়ারে ক্রমাগত পতনে সরাসরি কমেছে সংস্থার কর্ণধার ইলন মাস্কের সম্পদও। তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে গিয়েছে। বর্তমানে মাস্কের সম্পত্তির পরিমাণ রয়েছে ৩৪৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও এখনও তিনি বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। বিশেষ করে মাস্কের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা সারা বিশ্বে টেসলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও বয়কটের জন্ম দিয়েছে। এরপর টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নিজের ভূমিকা কমানোর ঘোষণা দেন।

 

পাশাপাশি এবার মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের অন্তর্ভুক্ত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কোম্পানি স্টারলিংকের ব্যবসাও মার খেতে শুরু করেছে। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় ইলন মাস্কের কোম্পানির বৈশ্বিক সম্প্রসারণ ব্যাহত হচ্ছে। এখন যে দেশেই ইলন মাস্কের কোম্পানি চুক্তি করতে যাক না কেন, তারা এখন রাজনৈতিকভাবেও সেটি বিবেচনা করবে। ইতিমধ্যে যেসব জায়গায় স্টারলিংক ব্যবসা করছে, সেখানেও তারা প্রত্যাঘাতের সম্মুখীন হচ্ছে।

 

ডিওজিই নিয়ে প্রশাসনে বিরোধ : দ্বিতীয় বার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার পর ইলন মাস্ককে নিজের অন্যতম পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প। তাছাড়া ‘বিশেষ সরকারি কর্মচারী’ হিসাবে মাস্কের জন্য তৈরি হয়েছিল আলাদা একটি দফতর। তার নাম সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দফতর (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি)। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডিওজিই-তে যোগ দেন মাস্ক। তার লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বাজেট থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ কমানো। তবে সংস্থাটির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত তারা মাত্র ১৭৫ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পেরেছে—যা মাথাপিছু হিসেবে ১০৮৮.৯৬ ডলার। সংস্থাটির মাধ্যমে বরাদ্দ স্থগিত এবং ব্যাপক ছাঁটাই কর্মসূচির মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের পথ অবলম্বন করেছিলেন টেসলা মালিক।

 

সিনেটে অননুমোদিত এবং সরাসরি নির্বাচিত না হলেও মাস্ক বারবার আমলাতন্ত্রকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অনির্বাচিত, অসাংবিধানিক চতুর্থ শাখা’ বলে আক্রমণ করেন। তিনি খুব দ্রুতই ফেডারেল জনবল ও বাজেটে ব্যাপক কাটছাঁট শুরু করেন। সরকারি নথি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, বরখাস্তকরণ, ছাঁটাইয়ের হুমকি, চাকরি ছাড়ার জন্য প্রণোদনা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার কর্মী কমিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন, প্রায় ২৩ লাখ সরকারি কর্মীর যা প্রায় ১২ শতাংশ।

 

ডিওজিই-এর প্রধান হিসেবে কাজ করার সময় মাস্ক ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। হাজার হাজার ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই এবং বিদেশি সহায়তা কমানোর উদ্যোগ তাকে বিতর্কিত করে তোলে। তবে এসব বিষয় নিয়ে মাস্কের দাবি, তিনি যা করেছেন, তা প্রয়োজনীয় ছিল। মাস্কের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডে প্রথমদিকে সন্তুষ্ট থাকলেও ক্রমশ বিরক্ত হতে থাকেন ক্যাবিনেট সদস্যরা। এরমধ্যেই আবার কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে যান তিনি। তাদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি এবং অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। এতদিন মাস্কের নেতৃত্বে চলা এই প্রতিষ্ঠানের কিছু পদক্ষেপে আদালতও বাধ সেধেছে । বিচারকরা অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গণছাঁটাইয়ের নির্দেশ বাতিল করে কর্মীদের পুনর্বহালে নির্দেশও দিয়েছে।

 

পদত্যাগের পেছনে তার ব্যবসায়িক স্বার্থও ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডিওজিই’র কার্যক্রমের কারণে তার কোম্পানি টেসলা রাজনৈতিক বিতর্কের মুখে পড়ে এবং বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক কর বিল, যা আগামী দশকে ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তা মাস্কের ব্যয় সংকোচন নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পাশাপাশি ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন—যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে, তখন ইলন মাস্ক এই শুল্কের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে একটি ‘মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল’ গঠনের প্রস্তাব দেন। মাস্কের এই প্রস্তাব সরাসরি ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিষয়টি নিয়ে মাস্ক ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পিটার নাভারোর সাথে বিরোধে জড়ান। সবশেষ মি. ট্রাম্পের কর বিলের প্রকাশ্যে সমালোচনা করার পর তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ইতি অনিবার্য হয়ে ওঠে।

 

যদিও মার্কিন প্রশাসন বলছে, ডিওজিই’র কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, তবে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নবগঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠানটব ২০২৬ সালের ৪ জুলাই পর্যন্ত কার্যক্রম চালানোর জন্য স্থাপিত হয়েছিল, মাস্কের প্রস্থান এবং কার্যক্রমের সীমিত সাফল্যের কারণে এর কার্যক্রম সীমিত, স্থগিত বা পুনর্গঠন হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারপর্বের সময় মাস্ক ও ট্রাম্পের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাস্ক ট্রাম্পকে জেতাতে মোট ২৭ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করেন। তিনি দেশজুড়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের ছাপিয়ে যান। তথ্যসূত্র : এএফপি, বিবিসি ও আলজাজিরা।

 

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট