চট্টগ্রাম রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

সর্বশেষ:

হাসবে ফুটো হার্টের ৭০ শিশু
ফাইল ছবি

হাসবে ফুটো হার্টের ৭০ শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ মে, ২০২৫ | ৫:১৯ অপরাহ্ণ

চার বছরের মাশরীফ সকাল থেকে মায়ের হাত ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সামনে অপেক্ষা করছে। তার সরল চোখের চাহনিতে যেন হাজারো প্রশ্ন। কলেজ শিক্ষিকা আইনুন নাহার ছেলের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন। বুকের ভেতর অজানা শঙ্কা। মাশরীফ জন্ম থেকেই হার্টের ছিদ্র নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত মা। কত ডাক্তার, কত পরীক্ষা-তবু সন্তানের মুখের হাসি ফেরেনি। আর্থিক সীমাবদ্ধতায় বিদেশে নেওয়ার স্বপ্নও অপূর্ণ।

 

হঠাৎ খবর পেলেন, তুরস্কের খ্যাতনামা কার্ডিওলজিস্ট ডা. ওসমান বাজপেনারের নেতৃত্বে বিদেশি বিশেষজ্ঞ দল এসেছেন চমেকে হাসপাতালে। বিনামূল্যে হার্টের রোগী শিশুদের পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেবেন। এ যেন আশার আলো। আইনুন নাহার বলেন, বিদেশি ডাক্তার আসবে শুনে ছেলেকে নিয়ে এসেছি। যদি এবার একটা আশার খবর পাই।

 

শুধু মাশরীফ নয়, আইনুন নাহারের মতো শত শত মা এদিন বুক ভরা আশা নিয়ে এসেছিলেন গতকাল। এই ক্যাম্পে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাইরেও কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী থেকে এসেছে শিশুরা। চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের পরিবেশ গতকাল ছিল একটু অন্যরকম। করিডোরজুড়ে শত শত শিশুর মুখ। কারো হাতে বাবার আঙুল, কেউ মায়ের কোলে। প্রত্যেকের বুকের ভেতর একই গল্প জন্মগত হার্টের ছিদ্র। এদিন-চারটি দলে ভাগ হয়ে ৫শ’র বেশি শিশুর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তুর্কি চিকিৎসকদের নেতৃত্বে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, দিনব্যাপী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৫০০ এর বেশি শিশুর মধ্যে ৭০ জনকে বাছাই করা হয়, যাদের হার্টে আগামী সেপ্টেম্বরে বিনামূল্যে ‘ডিভাইস ক্লোজার’ পদ্ধতিতে বিনামূল্যে ডিভাইস বসানো হবে।

 

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, হৃদরোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসা সাধারণের নাগালে আনতে এ ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুব দরকার। দিনভর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৭০ জন শিশুকে বাছাই করা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে বিদেশি দল আবারও আসবেন। তখন বাছাইকৃত শিশুদের ডিভাইস স্থাপন করা হবে।

 

চিকিৎসকরা জানান, জন্মগত হার্টের ত্রুটি নিয়ে এই শিশুগুলোর জীবন কতটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে হার্টের এই ছিদ্র প্রাণনাশের কারণও হতে পারে।

 

চমেক কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ নূর উদ্দীন তারেক বলেন, এই উদ্যোগ শুধু চিকিৎসা নয়, দেশের শিশু হার্টের রোগ চিকিৎসার ইতিহাসে নতুন অধ্যায়। অনেক পরিবারের স্বপ্ন রক্ষা করবে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট