চট্টগ্রাম সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

ঈদের আগেভাগেই জমজমাট ব্যাংকপাড়ার জুতার বাজার

আরাফাত বিন হাসান

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১২:১৭ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর বাণিজ্যিক পাড়া খ্যাত আগ্রাবাদ আখতারুজ্জামান সেন্টার থেকে পূর্বদিকের সড়ক ধরে এগুতেই চোখে পড়বে ফুটপাতে সাজিয়ে রাখা কয়েকটা জুতার দোকান। এসব দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ডানপাশে তাকাতেই চোখে পড়বে গলির দুপাশে সাজিয়ে রাখা আরও কয়েক ডজন দোকান। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া এখানকার প্রায় সব দোকানই ভাসমান।
স্থানীয়দের তথ্যানুযায়ী নগরীতে এটাই সবচেয়ে বড় ভাসমান জুতার বাজার। শহরের নানা নামিদামি ব্র্যান্ডের বাইরে অপেক্ষাকৃত কম দামে টেকসই জুতা মেলে এখানে। তাই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই বাজার। সাধারণ সময়ে ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও ঈদ ঘিরে বেড়েছে ভিড়। এখনও মাস দুয়েক বাকি থাকলেও ঈদের আগের ঝামেলা এড়াতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্রেতারা। তাতেই জমজমাট ব্যাংকপাড়ার এই জুতার বাজার। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিন ব্যাংকপাড়া ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের জুতার পসরা সাজিয়ে বসেছেন ভাসমান বিক্রেতারা। তাদের ঘিরে দেখা গেছে নানা বয়সী ক্রেতার উপচে পড়ে ভিড়।  পছন্দের জুতা নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন তারা। 
তাদের  একজন রিজাউর। সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী রিজাউর জানান, ঈদের সময় ক্রেতাদের অতিরিক্ত ভিড় হয় এখানে। তাই আগেভাগেই পরিবারের সবার  জন্য জুতা দেখছেন তিনি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রুদ্র কয়েকবছর ধরে এই বাজার থেকেই ব্যবহারের জুতা কিনছেন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি তিন বছর ধরে এখানে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। চাকরি শুরুর  পর থেকে এখান থেকেই জুতা কিনি। কারণ এখানে বাছাই করে নিতে পারলে কম দামে ভালো জুতা পাওয়া যায়।  এ সময় ভাসমান এই জুতার বাজারে কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয় পূর্বকোণ প্রতিনিধির। তারা জানান, প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে এসব দোকান। এখানকার প্রধান ক্রেতা শিক্ষার্থী ও নি¤œ আয়ের মানুষ। অধিকাংশ জুতার দামও তিনশ’ থেকে হাজারের মধ্যে। তবে বেশি দামের জুতাও রাখেন কিছু কিছু বিক্রেতা। 
ভাসমান এই বাজারে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের লোগো বা স্টিকার স¤বলিত জুতাও দেখা যায়। আসল নকল বোঝার খুব একটা সুযোগ না থাকলেও ক্রেতাদের ধারণা এসব জুতা নকল। তবে বিক্রেতাদের দাবি সত্যিকারের ব্র্যান্ডের জুতা সিইপিজেডের বিভিন্ন কারখানা থেকে সংগ্রহ করেন তারা। তাই অনেকটা কম দামে বিক্রি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা বলেন, মূলত বিভিন্ন কারখানা নামিদামি ব্র্যান্ডের জুতা তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করে। এরমধ্যে মধ্যে কিছু কিছু জুতা তৈরির পর বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়। সেসব বাতিল জুতাই সংগ্রহ করে আগ্রাবাদের ভাসমান বাজারে বিক্রি করা হয়।
তবে কোনো কোনো বিক্রেতা বাইর থেকে সংগ্রহ করা জুতায় নকল লোগো বা স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করেন বলেও জানান তিনি। 
তকিবুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, এখানে আমি ৭ বছর ধরে ব্যবসা করছি। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জোড়া জুতা বিক্রি হয়। তবে সবচেয়ে জমজমাট হয় ঈদের আগে। কারণ কম দামে এখানে ভালো জুতা পাওয়া যায় বলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ নতুন জুতা কিনতে আসেন। এখানকার জুতা টেকসই বলে অনেক ধনী ব্যক্তিও মাঝেমধ্যে এখানে জুতা কিনতে আসেন। 
আব্দুর রহিম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, কম দামে ভালো জুতার জন্য এই এলাকাটা বেশ বিখ্যাত। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা জুতার জন্য এই এলাকায় আসেন। এখানে তিনশ’ থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকার জুতাও পাওয়া যায়। 
তবে নগরীর সবচেয়ে বড় এই ভাসমান জুতার দোকান থেকে জুতা কেনার ঝুঁকিও রয়েছে কিছু। বাছাই করে নিতে না পারলে এই বাজার থেকে জুতা কিনে ঠকতে হয় বলে ধারণা অনেকের। নাছির উদ্দিন নামের এক ক্রেতার অভিযোগ, এখান থেকে জুতা কিনে ঠকেছেন তিনি। বিক্রেতারা বিক্রির সময় বেশ সুনাম করলেও কেনার কয়েকদিন পরেই ছিঁড়ে গেছে তার জুতা। ব্যবসায়ীদের দাবি, অধিকাংশ জুতাই টেকসই, অভিযোগ যৎসামান্য। তাদের বিক্রি করা অধিকাংশ জুতাই আসে ভারত আর চীন থেকে। তবে স্থানীয় কারখানায় তৈরি জুতাও রাখেন কেউ কেউ। ওই এলাকায় মোট ৭০ থেকে ৮০ জনের মত ভাসমান জুতা ব্যবসায়ী রয়েছেন বলেও জানান তারা।
পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট