শিম রাজ্য খ্যাত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এবার শিমের ফলন অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এতে অন্যান্য বছর এখানে গড়ে ১৫০ কোটি টাকার শিম উৎপাদন হলেও এবার এখানে ২১০ কোটি টাকার শিম উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। অন্যদিকে শিমের বাম্পার ফলনের সাথে ন্যায্য মূল্য পেয়ে খুশি কৃষক। এখানে উৎপাদিত শিম দেশের চাহিদা পূরণ করে ইউরোপ-আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডকে বলা হয় সবজি ভাণ্ডার। এখানে সারাবছর নানারকম সবজির উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে এখানে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় শিম। এখানে কার্তিকোটা, কার্ত্তিকবাটা, বাটা, পুটি, ছুরি, লইট্টা ও রুপবান এ ৭ প্রজাতির শিম চাষ হয়ে থাকে। রুপবান হলো গ্রীষ্মকালীন শিম। যা বিগত কয়েকবছর ধরে চাষ শুরু হয়েছে। অন্য শিমগুলো শীত মৌসুমেই হয়ে থাকে।
সরেজমিনে উপজেলার অন্যতম শিম চাষ এলাকা সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, পৌরসদর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয়, বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল গ্রামের কৃষক মো. জামাল উল্লা, মুকসেদ আহমদ, আনোয়ার হোসেন ও মানিকের সাথে।
কৃষক জামাল উল্লা কার্ত্তিকোটা শিম চাষ করেছেন ১০০ শতাংশ জমিতে। এতে তার বীজ, সার, কীটনাশক, কঞ্চি, শ্রমিক মজুরি প্রভৃতি বাবদ খরচ হয় আনুমানিক ৮০ হাজার টাকা। গত এক মাসে তিনি প্রায় ২ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন। আরো লক্ষাধিক টাকার শিম বিক্রি হবে তার জমিতে।
তিনি বলেন, এবার তেমন কোন রোগ বালাই হয়নি। সমস্যা দেখা গেলে এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পিপাস কান্তি চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন দিতেন কি ঔষুধ ব্যবহার করতে হবে। তা ব্যবহার করে লাভবান হয়েছেন তিনি।
এখানে ৪২ শতক জমিতে কার্ত্তিকবাটা শিম চাষ করেছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। আমি দেরিতে চাষ করেছি। তাই বিক্রি শুরু হয়েছে অল্পদিন আগে। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার বিক্রি করেছি। আরো ৬০-৭০ হাজার টাকার বিক্রি হবে।
পৌরসভাধীন নুনাছড়া এলাকার এক কৃষক মো. নুর নবী বলেন, তিনি প্রায় ১৫০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছিলো ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মতো। আগিলা চাষ করায় নভেম্বর থেকে শিম বিক্রি শুরু করেন তিনি। প্রথম দিকে প্রতি কেজি শিম ১২০ টাকাও বিক্রি করেছেন। এখনো কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। এই পর্যন্ত তিনি শিম বিক্রি করেছেন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। আরো লক্ষাধিক টাকার শিম বিক্রি হবে তার জমিতে।
এই কৃষকরা জানান, শিম রাজ্য সীতাকুণ্ডের শিম স্বাদেও অতুলনীয়। এখান থেকে পাইকাররা শিম কিনে শিম ও বীচি পৃথকভাবে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করেন। এতে তারাও যেমন ভালো দাম পাচ্ছেন, তেমনি দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে।
টেরিয়াইল এলাকায় দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, এই মৌসুমে যেদিকে তাকাবেন শুধু শিম দেখবেন। অনেক এলাকায় কৃষকদের বাজারেও যেতে হয় না। পাইকাররা এসে নিয়ে যান। তাতে পরিবহন খরচ কমে। অন্যদিকে দামও বেশ ভালো। তাই তারা খুশি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবীবুল্লা বলেন, এবার এখানে ২৫০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হয়েছে। যা নতুন রেকর্ড। এসব শিম যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। এই শিম থেকে অন্তত ২১০ কোটি টাকা আয় হবে। অতীতে গড়ে ১৫০ কোটি টাকার শিম বিক্রি হতো। কৃষি বিভাগ থেকে শিম চাষীদের পরামর্শ ও সার, বীজ নানান সহযোগিতা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
পূর্বকোণ/ইব