দক্ষিণ কাট্টলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহিলা ভোটকেন্দ্রে (কেন্দ্র-২) ভোটার সংখ্যা ২৮০৪ জন। ভোট পড়েছে ৫৫টি। নৌকা প্রতীক ৫২টি, আরমান আলী ১টি ও জাপা প্রার্থীর পক্ষে দুই ভোট পড়েছে। ভোটের হার এক দশমিক ৯৬ শতাংশ। একই এলাকার ফইল্যাতলী বাজার প্রাণ হরি আমিন একাডেমির মহিলা ভোটকেন্দ্রে (কেন্দ্র-২) ভোটার সংখ্যা ২৫৪৫ জন। ভোট পড়েছে ১০২টি। ভোটের হার ৪ শতাংশ। দুটি কেন্দ্রই প্রয়াত সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমিনের বাড়ি সংলগ্ন এলাকার ভোটকেন্দ্রে। আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক খ্যাত এসব এলাকায় ভোট পড়ার হার খুবই কম।
তবে কাট্টলি এলাকার বাসিন্দা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আরমান আলীর অভিযোগ, সকাল ১১টার দিকে বাড়ির পাশের কেন্দ্র প্রাণহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যাই। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার নেতৃত্বে কর্মী-সমর্থকেরা ভোটাররা কোন প্রতীকে দেবে তা জিজ্ঞেস করেই কেন্দ্রে ঢোকানো হয়। আমি এর প্রতিবাদ করলে কেন্দ্রের ভেতরেই আমাকে ঘিরে ধরে ধাক্কা ও টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে দেয়। আমাকে মারধর ও বাধা দেওয়ার পর ভয়ে আর ভোটাররা কেন্দ্রে আসেনি।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু ছাড়া অন্য পাঁচ প্রার্থী দুই অঙ্কের ভোট পেরুতে পারেননি। তাদের মধ্যে শুধু জাতীয় পার্টি প্রার্থী মো. সামসুল আলম একটি কেন্দ্রে ৭০ ভোট পেয়েছেন। অন্যরা ৩৬ ভোটের নিচে রয়েছে।
১৫৬ ভোটকন্দ্রের ফলাফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া অন্য পাঁচ প্রার্থী ১০ ভোটের কম ভোট পড়েছে ৮৮ কেন্দ্রে। অর্থাৎ ৫৬ দশমিক ৪১ শতাংশ কেন্দ্রে ১০ ভোটের কম ভোট পেয়েছেন ৫ প্রার্থী।
ফলাফলের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সামসুল আলম মুহুরীপাড়া আল জাবের ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৭০ ভোট পেয়েছেন। তিনি শূন্য ভোট পেয়েছেন ২টি কেন্দ্রে। তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী দীপক কুমার পালিত ইউসেফ আমবাগান স্কুল কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৩৬ ভোট পেয়েছেন। ভোটার সংখ্যা ৩৬৭৫ ভোট। ভোট পড়েছে ৮২৪ ভোট। নৌকা প্রতীক পেয়েছে ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া (রকেট) প্রতীকে সর্বোচ্চ ভোট পান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। পেয়েছেন ১২ ভোট। ২৯ কেন্দ্রে তিনি শূন্য ভোট পেয়েছেন। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আরমান আলী উত্তর হালিশহর ফুল চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। তিনি ওই কেন্দ্রের ভোটার। ওই কেন্দ্রে তিনি ভোট পান ১৮ ভোট। তবে ২৩টি কেন্দ্রে কোনো ভোট পাননি তিনি। সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী রশিদ মিয়া পাহাড়তলী আলহাজ ইউনুস মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা ভোটকেন্দ্র ভোট পান ১৭ ভোট। তবে ১৫ কেন্দ্রে কোনো ভোট পাননি তিনি।
চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী, হালিশহর, ডবলমুরিং) ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৩ ভোট। ১৫৬ কেন্দ্রে ১২৫১ ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোট দিয়েছেন ৫৭ হাজার ১৫৩ জন ভোটার। ভোটের হার ১১ দশমকি ৭০ শতাংশ। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু (নৌকা) ৫২ হাজার ৯২৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. সামসুল আলম পেয়েছেন ১৫৭২ ভোট। তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী দীপক কুমার পালিত (সোনালী আঁশ) পেয়েছেন ১২৩০ ভোট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) প্রার্থী রশিদ মিয়া (ছড়ি) পেয়েছেন ৫৭৯ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া (রকেট) পেয়েছেন ৩৬৯ ভোট ও মো. আরমান আলী (বেলুন) পেয়েছেন ৪৮০ ভোট।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভোটপ্রিয় বাঙালি এখন ভোটবিমুখ হয়ে পড়েছে। ভোটের প্রতি অবিশ্বাস-অনাস্থা, ভীতি ও আতঙ্কের কারণেই এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনব্যবস্থা এখন আইসিইউতে চলে গেছে। কখন লাইফসাপোর্টে চলে যায়- বলা যাচ্ছে না। অর্থাৎ নির্বাচন এখন খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েছে। এটা নির্বাচনব্যবস্থা, গণতন্ত্র, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য অশনিসংকেত।
পূর্বকোণ/মাহমুদ