চলতি বোরো মৌসুমে ধানের ভালো ফলন হয়েছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় ভালোভাবে ফলন গোলায় তুলেছেন কৃষকেরা। বোরো হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় মৌসুম। বোরোর বাম্পার ফলনের মধ্যে দেশের মজুত পরিস্থিতিও ভালো রয়েছে। এ দুই কারণে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে সরু চালের দাম; পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি অন্তত ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। মোটা চালের দামও বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা কমেছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন গতকাল পূর্বকোণকে বলেছেন, চলতি বোরো মৌসুমে ধানের প্রচুর ফলন হয়েছে। একইসঙ্গে প্রচুর চাল আমদানি হয়েছে। দুটো মিলে সবধরনের চালের দাম কমতে শুরু করেছে। উৎপাদন-আমদানি ও মজুত বাড়তি থাকায় চালের দাম আরও কমবে বলে জানান তিনি।
নগরীর চালের বড় পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী ও চাক্তাই বাজারে জিরাশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি মানভেদে ৩৪০০-৩৬০০ টাকা। গত মার্চ মাসে তা বিক্রি হয়েছিল ৪১০০-৪২০০ টাকায়। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ৩৮০০ টাকা দরে। মার্চ মাসে তা ৪৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কাটারি আতপ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০০-৩৭০০ টাকা দরে; মার্চ মাসে ৪৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মিনিকেট আতপ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকায়; তা বিক্রি হয়েছিল ৩৫০০ টাকায়।
চাল ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলেন, বোরো ধান কাটার পর থেকেই ধীরে ধীরে চালের দাম কমতে শুরু হয়েছে। সর্বশেষ এক সপ্তাহের ব্যবধানে সরু চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সরু চাল ছাড়া মোটা চালের দামও কমতির দিকে রয়েছে।
পাইকারি বাজারে বর্তমানে গুঁটি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ২৫০০ টাকা দরে। মার্চ মাসে তা ২৬০০-২৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। মোটা সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকা দরে। তা বিক্রি হয়েছিল ২৪০০-২৫০০ টাকা দরে। নূরজাহান সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২৭৫০ টাকা দরে। তা বিক্রি হয়েছিল ২৮৫০ টাকা দরে। বেতি আতপ বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ টাকা দরে। আগে তা ২৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
দীর্ঘদিন ধরে চালের বাজার অস্থির ছিল। জুলাই আন্দোলনের অজুহাত এবং সরকার পতনের পর থেকে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছিল চালের দাম। এছাড়া পরিবহন সংকট ও গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে সে সময়ে চালের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তবে চালের দাম বাড়ানোর নেপথ্যে কর্পোরেট কোম্পানি ও উত্তরবঙ্গের বড় চাতালের কারসাজির অভিযোগ করেছিলেন চাল ব্যবসায়ীরা। শেষে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে আমদানি শুল্ক কমানো ও চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর চাল আমদানি করা হয়। সরকারের মজুত বৃদ্ধি ও চলতি মৌসুমে বোরোর ভালো ফলন হওয়ায় চালের বাজার কমতির দিকে রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বাংলাদেশে খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল মজুত আছে ১১ লাখ ৪০ হাজার ৫৭৫ টন, গম মজুত আছে ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৬৭ টন, ধান ১৬ হাজার ৯৪১ টন। গত মার্চ মাসে চালের মজুত ছিল ১০ লাখ ৮০ হাজার ২৬৭ টন।
ধানের বড় মৌসুম হচ্ছে বোরো। মোট ধানের প্রায় ৫৪ শতাংশই উৎপাদিত হয় বোরো মৌসুমে। চলতি বছর বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ কোটি ২৬ লাখ টন। চলতি (২০২৫ সাল) বোরো মৌসুম থেকে ১৪ লাখ টন চাল ও ৫ লাখ টন ধান সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৪ মে পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ৬,২২০ দশমিক ৩০ টন খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে আমদানি ১১১৭ দশমিক ২২ টন। বেসরকারি আমদানি ৫১০৩ দশমিক ৩ টন। এর মধ্যে চাল আমদানি ১১৭০ দশমিক ৮৭ টন। গম আমদানি ৫০৪৯ দশমিক ৪৩ টন।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন বলেন, চাল আমদানির পর বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাজারে প্রচুর চাল রয়েছে। সরকারের নজরদারি বাড়ানো হলে বাজার পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। একইসঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও সিন্ডিকেটের কারসাজি থামানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রবীণ এ ব্যবসায়ী নেতা।
পূর্বকোণ/ইবনুর