বাজারে পুরোদমে আসতে শুরু করেছে গ্রীষ্মকালীন সবজি। কমেছে দামও। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সবজির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারে অনেকটা পানির দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা পণ্য। তবে পাইকারির তুলনায় বাড়তি দাম খুচরায়। কিছু কিছু সবজি পাইকারির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে খুচরায়।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে পাইকারিতে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ঢেঁড়স খুচরায় ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। যা প্রায় চার গুণ বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার রিয়াজউদ্দিন বাজারে ১০ থেকে ৩০ টাকা পাইকারি কেজি দরে বিক্রি হয়েছে অধিকাংশ সবজি। এই বাজারে বিক্রি হওয়া ২১টি সবজির মধ্যে ১৪টি সবজির দামই ২০ টাকার মধ্যে। বাকি ৭ সবজির মধ্যে ৫ টির দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। আর দুটি সবজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ওই বাজারে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে বিক্রি হওয়া সবজির মধ্যে চালকুমড়া ১৫, ঢেঁড়স ১০, মিষ্টি কুমড়া ১২, পটল ১৮, খিরা ১৫, বেগুন ৩০, বরবটি ২০, চিচিঙ্গা ২০, বাঁধাকপি ২০, ঝিঙে ২০, শসা ২০, করলা ১৫, লাউ ১৫, কাঁকরোল ২৫, কাঁচা পেঁপে ২৫, কাঁচা মরিচ ২০, কচুরমুখী ৩০, টমেটো ২৫, গাজর ২০, শিম ৫০ এবং ফুলকপি ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বন্দরনগরে খুচরায়ও দাম কমেছে সবজির। তবে পাইকারির তুলনায় নগন্য। পাইকারিতে অধিকাংশ সবজি ১০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও খুচরায় সেসব বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। যা অনেকক্ষেত্রে পাইকারি দরের চেয়ে দুই থেকে চার গুণ পর্যন্ত বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর অক্সিজেন, দুই নম্বর গেট, চকবাজার, কাজির দেউড়ি, আতুরার ডিপো, কর্ণফুলী কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন কাঁচা বাজার ঘুরে খুচরা বাজারের এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন নগরে শসা, বরবটি, ঢেঁড়স, পরুল, পটল, টমেটো ও কাঁকরোল ৪০; ঝিঙে ও করলা ৫০; বেগুন ও কাঁচা মরিচ ৬০; মিষ্টি কুমড়া ও লাউ ৩০ এবং লতি ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। যা পাইকারি দরের চেয়ে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেশি।
পাইকারি ও সবজির বাজারের এমন তারতম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর অক্সিজেন এলাকার সবজি ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন জানান, পরিবহন, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুত বিলসহ নানা খাতে বাড়তি খরচ হয় তাদের। তাই এসব ব্যয়ের সমন্বয় করতে গিয়ে সবজিও পাইকারির চেয়ে কিছুটা বাড়তি দরে বিক্রি করতে হয় তাদের। তবে অযৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করেন না বলে দাবি তাদের।
পাইকারি ও খুচরা দরের এমন তারতম্যের বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আইনে অনেককিছুই আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। কাঁচাবাজারে স্বচ্ছতার জন্য রশিদ ব্যবস্থার প্রচলন নিশ্চিত করতে হবে, কৃষকদের বিপণন ব্যবস্থায় নিয়ে আসতে হবে। আর তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকিও বাড়াতে হবে, যে কোনো মূল্যে রশিদ ব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। তাহলেই স্বচ্ছতা আসবে।
সবজির পাশাপাশি বন্দরনগরে দাম কমেছে মুরগিরও। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। অন্যান্য মুরগির মধ্যে দেশি ৬২০, সোনালি ২৫০ এবং লেয়ার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। নগরে মাছের মধ্যে তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২৬০, পাঙাস ১৮০ থেকে ২২০, রুই ৩৫০-৩৮০, কাতল ৩৮০ থেকে ৪০০, পাবদা ৪০০-৪৫০, রূপচাঁদা এক হাজার, ছুরি মাছ ৪০০-৫০০, স্যালমন ৭০০, পোয়া ২৫০-৪৫০, মৃগেল ২৬০, নারকেলি ২৮০, বেলে ২৬০ এবং টুনাফিশ ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
পূর্বকোণ/ইবনুর