চট্টগ্রাম সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

নোমান ভাইয়ের সঙ্গে শেষ দেখা

নওশের আলী খান

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর। সন্ধ্যা প্রায় সমাগত। একটা কাজে যেতে হয় ঢাকার ধানমন্ডিতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি পাশের ভবনে থাকেন রাজনীতিবিদ আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন। তাই ভাবলাম উনাকে দেখে আসি। ভবনের সিকিউরিটিকে চট্টগ্রামের পূর্বকোণের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে উনার ফ্ল্যাটে যাওয়ার কথা জানাই। সিকিউরিটি ইন্টারকমে আলাপের পর ফ্ল্যাট চিনিয়ে দিলেন।

 

ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি আগে থেকে ৭/৮ জন লোক বসে আছেন। আমি একপাশে একটি চেয়ারে গিয়ে বসলাম। সবার জন্য দেওয়া হল চা-নাস্তা। কিছুক্ষণ পর নোমান সাহেব এলেন। এসেই সবাইকে দেখার পর আমাকে দেখে কাছে ডেকে নিলেন। এরমধ্যে অন্য লোকদের সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয়ে আলাপের পর আমি তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলাম। তিনি বললেন তেমন ভাল না। এখন অনেককে চিনতে পারি না। এরপর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করলেন। জানতে চাইলাম কখন চট্টগ্রাম আসবেন। শরীর ভাল থাকলে কয়েকদিন পর আসবেন বলে জানালেন। এ দেখা যে শেষ দেখা হবে, কে জানতো। তিনি নিজ শহরে ফিরছেন তবে নিথর দেহে।

 

সাংবাদিক ছাড়াও একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় ষাটের দশক থেকে উনার সঙ্গে পরিচয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান সাত ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ। উনার মেঝ ভাই আবদুল্লাহ আল হারুন ছিলেন চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। একমাত্র নোমান সাহেব ছিলেন ভাইদের মধ্যে ভিন্ন মতাবলম্বী। তিনি ভাসানী ন্যাপের নেতা ছিলেন। ষাটের দশকে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তাঁকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল। কপর্দকহীন অবস্থায় কাটাতে হয়েছে দিন। এমনকি অভুক্ত থাকতে হয়েছে। ওই সময় তিনি কারাবরণ করেন। কারাগারে থেকেই তিনি ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন।

 

স্বাধীনতার পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করলে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে চট্টগ্রামে দল গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে রাউজানে তাঁকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাও বলা যায়। ঘরে ঘরে গিয়ে দলের জন্য তাঁকে কাজ করতে দেখা গেছে। ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপি সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী এবং ২০০১ সালে খাদ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে দৈনিক পূর্বকোণের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে ডেইরি আন্দোলন গড়ে উঠলে তিনি তাতে সমর্থন প্রদান করেন।

 

একইভাবে মো. ইউসুফ চৌধুরী বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির মাধ্যমে চট্টগ্রামে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন শুরু করলে মন্ত্রী হিসেবে আবদুল্লাহ আল নোমান সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড স্থাপন এবং কর্ণফুলী সেতু নির্মাণে এককভাবে ভূমিকা রাখেন। আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে ছিল সর্বস্তরের মানুষের যোগাযোগ। সরকারে থাকাকালীন সকল দলের নেতাদের সঙ্গেও ছিল তাঁর সম্পর্ক। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সদালাপী নিরহংকার ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন রাজনীতিক আবদুল্লাহ আল নোমান।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট