চট্টগ্রাম রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

১৪ বছরেও স্নাতক শেষ হয়নি চবির প্রতিবন্ধী ছাত্রের, পরীক্ষক বললেন-রেজাল্ট ভালো করাতেই দেরি হচ্ছে!

চবি সংবাদদাতা

৩ অক্টোবর, ২০২৪ | ৭:৫৬ অপরাহ্ণ

যে স্বপ্ন নিয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম তা অধরাই থেকে গেলো। আমার বন্ধুরা জর্জ, এডভোকেট, বিসিএস ক্যাডারসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে দেশকে সার্ভ করছে। অন্যদিকে আমি নির্মল স্যারের কারণে দেশের বোঝা হয়ে আছি। শুনেছি আমার বিভাগের এক সিনিয়র ভাই এসব অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে আত্মহত্যা করেছিলো। সেই অভাগা সিনিয়র ভাইটির মত আমিও বারবার আত্মহত্যা করে মুক্ত হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে পারিনি। নিজ বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে রেজাল্ট আটকে রাখার অভিযোগ তুলে এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) আইন বিভাগের ২০০৯-১০ সেশনের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সোলাইমান বাদশা।

 

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অফিসে সংবাদ সম্মেলনে করেন ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী। সংবাদ সম্মেলনে আইন বিভাগের অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহার বিরুদ্ধে রেজাল্ট আটকে হয়রানির বিস্তর অভিযোগ করেন তিনি। লিখিত বক্তব্য সোলাইমান বাদশার পক্ষে পড়েন আইন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আবু শাহেদ।

 

তিনি বলেন, ১৮তম ব্যাচের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে আমি ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষে উত্তীর্ণ হই। কিন্তু চতুর্থ বর্ষের রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায় আমার ক্লাস টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় ফেল এসেছে। এরপর তৎকালীন পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান নির্মল কুমার সাহার কাছে টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় বসার অনুমতি চাই। আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও স্যার আমাকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেয়নি।

 

সোলাইমান বাদশা বলেন, ২০১৭ সালে আইন বিভাগের নতুন চেয়ারম্যান এবি এম আবু নোমান আমাকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেন। আমি পুনরায় পরীক্ষা দিলাম এবং পাশ করলাম। নির্মল স্যারের সাথে যোগাযোগ করে অনার্সের ফাইনাল রেজাল্ট প্রকাশ করতে বলি। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি আমার রেজাল্ট প্রকাশ করেননি। উনার কাছে আমি হাজার বারের উপরে গিয়েছি, তিনি আমাকে হয়রানি করেছেন।

 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোলাইমান বাদশা বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাকে দৃষ্টিশক্তি দেয়নি। আর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব নির্মল স্যার আমার জীবনের বাঁচার শেষ আশাটুকু কেড়ে নিয়েছেন।

 

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আবু শাহেদ বলেন, ভাইয়ের (বাদশা) সাথে আমিও ৬০-৭০ বার নির্মল স্যারের কাছে গিয়েছি। কতোবার আকুতি জানিয়েছি স্যারের কাছে যেন ভাইয়ের রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু স্যার আজকে কালকে করে করে ঘুরিয়েছেন। ডিপার্টমেন্টের অনেক স্যার উনাকে অনুরোধ করেন বাদশা ভাইয়ের বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ার জন্য। নির্মল স্যার আমাদের উপরে ক্ষোভ ঝেড়ে বলতেন কাউকে এসব ব্যাপারে জানালে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবা।

 

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা বলেন, তার পরীক্ষাগুলো অনেকদিন আগের, পর পর কয়েকটা স্পেশাল দেওয়ায় রেজাল্ট প্রকাশ করতে একটু দেরি হচ্ছে। চতুর্থ বর্ষের এখনো তিনটা টিউটোরিয়ালের রেজাল্ট হাতে পাইনি, হাতে পেলে রেজাল্ট দিয়ে দিব। আমি চেয়েছিলাম একটু দেরি হলেও তার রেজাল্টটা যাতে ভালো হয়। এই জন্য একটু দেরি হচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/জুনায়েদ/জেইউ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট