আগ্রাবাদ এলাকায় জাম্বুরি মাঠের একাংশে গড়ে তোলা কর্ণফুলী শিশু পার্কের অপসারণ চাইছেন স্থানীয়রা। মাঠটি দ্রুত শিশু-কিশোরদের খেলাধূলার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। স্থানীয়রা বলছেন- আশপাশে উন্মুক্ত খেলার মাঠ না থাকায় শিশু-কিশোররা ‘ঘরবন্দি’ হয়ে পড়েছে। তাদের সুস্থ বিনোদনের জন্য জাম্বুরি মাঠ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা জরুরি।
‘জাম্বুরি মাঠে দখলযজ্ঞ নয়, খেলার স্টেডিয়াম চাই’- স্লোগানে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠন- নওজোয়ান ক্লাবের সদস্যরা জাম্বুরি মাঠ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবিতে সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করছেন।
নওজোয়ান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল জানান, জাম্বুরি মাঠে গড়ে তোলা শিশু পার্কের লিজের মেয়াদ বছর খানেকের মধ্যে শেষ হবে। আমাদের দাবি- মেয়াদ যেন আর বাড়ানো না হয়। মাঠটি যেন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন খেলতে পারে। সরকারের কাছে বিনীত চাওয়া এটুকুই। এ জন্যই আমরা কাজ করছি।
ক্লাবের আজীবন সদস্য ও মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, এক সময় জাম্বুরি মাঠে এলাকার শিশু-কিশোররা খেলাধূলায় মেতে থাকতো। পার্ক করার জন্য মাঠের একাংশ লিজ দেওয়ায় তারা এখন খেলতে পারে না। এ জন্য সিটি কর্পোরেশনকে দ্রæত জাম্বুরি মাঠ খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা।
তিনি বলেন, শিশু পার্কটি কেবল পার্ক হলে আমাদের আপত্তি ছিলো না। কিন্তু পার্কের নামে সিটি কর্পোরেশন থেকে জায়গা লিজ নিয়ে সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর পার্কটি বখাটেদের আড্ডাখানায় পরিণত হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই স্থানীয়রা মানতে পারছেন না। তাই তারা আন্দোলন করছেন।
পার্ক গড়ে তোলার দীর্ঘদিন পর হঠাৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নগরবাসীর দাবির মুখে কাজীর দেউড়ির শিশু পার্ক উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সেখানে উদ্যান বানানো হচ্ছে। নগরীর একাধিক মাঠ খেলার জন্য উন্মক্ত করে দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন। এসব উদ্যোগ আমাদের প্রেরণা জোগাচ্ছে। তাই আমরা স্থানীয়দের নিয়ে জাম্বুরি মাঠ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।
জাম্বুরি মাঠ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবিতে সম্প্রতি আগ্রাবাদের একটি কনভেনশন হলে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নওজোয়ান ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু। সভায় মাঠ পুূনরুদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক সাজিব বিকাশ বড়ুয়া টুটুল করণীয় সংক্রান্ত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা, ক্রীড়া সংগঠকরা এ প্রস্তাবে একমত পোষণ করেন।
সভায় অংশ নেওয়া ক্রীড়া সংগঠকরা জানান- চট্টগ্রামে এমনিতেই খেলার মাঠের সঙ্কট। এ কারণে খেলাধূলায় দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম। মূল ইভেন্টগুলোর জন্য বিশেষায়িত মাঠের ব্যবস্থা করা না গেলে খেলাধূলার মান বিকাশ অসম্ভব। এ জন্য যেসব মাঠ দখল হয়ে গেছে সেগুলো উদ্ধার করা জরুরি।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সিজেকেএস কাউন্সিলর অনুপ বিশ্বাসও চান নগরীতে খেলার মাঠ আরও সমৃদ্ধ হোক। তিনি বলেন, খেলার মাঠ না থাকলে খেলোয়াড় উঠে আসবে কিভাবে?
প্রসঙ্গত- ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি পাকিস্তান ন্যাশনাল স্কাউট জাম্বুরি হয়েছিল চট্টগ্রামে। এর তিন দিন আগে আগ্রাবাদের ডাকাইত্যা বিল মাটি ভরাট করে মাঠ বানানো হয়। এ কারণে পরবর্তী সময়ে মাঠটি জাম্বুরি মাঠ নামে পরিচিতি পায়। মাঠের পাশে বহুতল কলোনি তৈরির সময় রাস্তা নির্মাণের কারণে বিশাল জাম্বুরি মাঠটি প্রথম দ্বিখণ্ডিত হয়।
জাম্বুরি মাঠটি মূলত গণপূর্ত বিভাগের সম্পত্তি। তাদের কাছ থেকে একাংশ লিজ নিয়ে শিশু পার্ক করেছে সিটি কর্পোরেশন।
পূর্বকোণ/এএইচ