চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫

সর্বশেষ:

দেশের সর্বোচ্চ সড়ক হিসেবে স্থান পেতে যাচ্ছে বান্দরবানের কেউক্রাডং সড়ক 

দেশের সর্বোচ্চ সড়ক হিসেবে স্থান পেতে যাচ্ছে বান্দরবানের কেউক্রাডং সড়ক 

মিনারুল হক

১ জুলাই, ২০২৫ | ৫:০৯ অপরাহ্ণ

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বত শৃঙ্গ বান্দরবানের কেউক্রাডং পাহাড়ের উপর দিয়ে একে বেঁকে চলে গিয়েছে খুব সুন্দর মনোরম পিচঢালা একটি সড়ক। উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি সেই সাথে চারিদিকে সবুজের সমারোহ। মেঘে ঢাকা সড়কে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ধরা দিয়েছে এই জায়গাটিতে। এই সড়কটিই এখন দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক হিসেবে স্থান পেতে যাচ্ছে।

 

কেউক্রাডং পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় সড়কটির উচ্চতা দাঁড়াচ্ছে ৯৬৫ মিটার। এত উঁচু দিয়ে দেশের আর কোন সড়ক নির্মাণ হয়নি। এর আগে থানচি বাকলাই লিক্রে সড়কটির সাদ্রাহাফং পাহাড়ের রেমংপাড়া স্থানটি ছিল সবচেয়ে উঁচু সড়ক। যার উচ্চতা ৯২২ মিটার। এই স্থানটিকে ছাড়িয়ে এখন কেউক্রাডং সড়কটি দেশের সর্বোচ্চ সড়ক।

 

এই তথ্যগুলো জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর ২৬ কনস্ট্রাকশন বেটেলিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আবু নোমান মো. মইনুল ইসলাম।

 

২০১৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্ত সড়কের অনুমোদনের পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেনাবাহিনীর ২৬ কনস্ট্রাকশন ব্যাটেলিয়ান বান্দরবানের রুমা উপজেলার বগালেক থেকে কেউক্রাডং হয়ে ধুপানিছড়া পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এই সড়কটির নির্মাণ কাজ করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্ত সড়কের প্রথম পর্যায়ের ৩১৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে একটি অংশ এই বান্দরবানের এই সড়কটি। এটি শুধু দেশের সর্বোচ্চ সড়কই নয় এলাকার পর্যটন, শিক্ষা চিকিৎসা, কৃষিসহ দুর্গম এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সড়কটি।

 

এই সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র ও নানা স্থাপনা। সেই সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্যাম্প, কাজুবাদাম, আম, লিচু, কফি, আনারসসহ নানা জাতের ফলের বাগান। এই সড়কটি ধরে এগিয়ে গেলে পড়বে স্বচ্ছ সুন্দর গ্রাম মুনলাই পাড়া, প্রকৃতির বিস্ময়কর বগালেক, দার্জিলিংপাড়া, সবচেয়ে উঁচু গ্রাম পাসিং পাড়া, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বত কেউক্রাডং পাহাড় চুড়া, মিয়ানমার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা সুংসং পাড়া, রোমানা পাড়া, ধুপানিছড়া আর ভারত মিয়ানমার বাংলাদেশের ত্রিসীমানা পিলার। যাওয়া যাবে বিশাল প্রাকৃতিক লেক রাইংক্ষ্যংএ। অপার সৌন্দর্যের এই জায়গাটিতে পর্যটকদের যাতায়াতও দিন দিন বাড়ছে।

 

২৬ কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু নোমান জানান, দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের উপর দিয়ে সড়কটি নির্মাণ কাজ ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ। সড়কটির নির্মাণের সময় সন্ত্রাসী তৎপরতা, বিরূপ আবহাওয়া, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নানা পারিপার্শ্বিক অবস্থায় খুবই বেক পেতে হয়েছিল সেনা সদস্যদের। তবে সব চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এই সড়কটি এখন স্থান করে নিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ সড়কে। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।

 

কেউক্রাডং পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসায়ী লালা বম জানান, সর্বোচ্চ সড়ক আর পাহাড় দেখতে অনেক পর্যটকই এখন এদিকে আসছেন। আগেও পাহাড় দেখতে পর্যটকরা আসতেন কিন্তু এখন মনোরম পিচ ঢালা পথ আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকরা ছুটে আসছেন। স্থানীয় ফল বাগান চাষী জুয়াল থাং জানান পুরা কেউক্রাডং পাহাড় জুড়ে উৎপাদিত নানা জাতের ফল সহজেই পরিবহন করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বান্দরবান খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলার ১২টি উপজেলার উপর দিয়ে ১০৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণ হবে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩৮৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১৭ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৩০ জুন। সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সয়ের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৬, ২০ এবং ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে।

 

পূর্বকোণ/পিআর/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট