কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে বানের স্রোতের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর স্থানীয়রা খাদ্য ও স্বাস্থ্য সহায়তাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। তখন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর বিশেষ উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাংলাদেশিদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ‘উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ নামে একটি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এর মাধ্যমে সেবা প্রদান করে আসছিল। এনজিও সংস্থাগুলোর অর্থ সংকটের কারণে হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সেবাপ্রার্থীরাও পড়েছে বেকায়দায়।
জানা যায়, ২০২২ সালের জুলাই মাসে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে শুরু হওয়া উখিয়া স্পেশালাইজড হসপিটালে সম্প্রতি দাতা সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের ব্যবস্থাপনায় আরও আধুনিক ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছিল। স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগণের জন্য হাসপাতালটি বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছিল এবং প্রতিদিন শত শত সেবাপ্রার্থী চিকিৎসা নিতেন। এখানে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও তরুণ স্বাস্থ্যকর্মীরাও কাজ করেন।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র অর্থায়নে নির্মিত হয় হাসপাতালটি। প্রতিদিন বহির্বিভাগে মাতৃস্বাস্থ্য, দন্তরোগ, চক্ষুরোগ, ফিজিওথেরাপি ও ল্যাবরেটরি টেস্টসহ বিভিন্ন সেবাপ্রদান করা হতো। জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে অর্থ সংকটে হাসপাতালটির কার্যক্রম আপাতত বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
এনজিও সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ ও উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসক মো. শাহিনুর জানান, আপাতত অর্থ সংকটের কারণে স্পেশালাইজড হাসপাতালের কার্যক্রম গত সোমবার থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন হাসপাতালটির কাজকর্ম গুছিয়ে নিচ্ছি। সবকিছু কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। যদি পরবর্তীতে সরকার বা দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআর বা অন্য কোনো সংস্থা অর্থায়ন করে তাহলে হাসপাতালটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হবে।
উখিয়া উপজেলার থাইংখালি গ্রামের বাসিন্দা সাবেকুন্নাহার বলেন, উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিনামূল্যে ভালো চিকিৎসা সেবা পেতাম। এখন হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান বলেন, স্পেশালাইজড হাসপাতালটি আমার ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে। এই হাসপাতালে নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যসহ অনেক ধনী লোকও চিকিৎসা নিতে যেতেন। কারণ ওখানে ভালো চিকিৎসাসেবা পাওয়া যেত। উখিয়া, টেকনাফ ও পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত লোকজনও এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসতো। এখন এটি অর্থ সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এই হাসপাতালের শুরুতে আমি বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছিলাম। এটি বন্ধ হওয়ায় প্রতিদিন শত শত লোকজন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। হাসপাতালটি পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ওই হাসপাতালে অনেক দামিদামি জিনিসপত্র রয়েছে। সেগুলো রক্ষার জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা দরকার। তা না হলে দামি জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, অর্থ সংকটের কারণে স্পেশালাইজড হাসপাতালটি গত সোমবার থেকে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এটি আপাতত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হবে তারাই হাসপাতালের কার্যক্রম পুনরায় চালু করবেন।
তিনি বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের জনগণ ও রোহিঙ্গা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালটির কার্যক্রম চালু রাখা প্রয়োজন।
পূর্বকোণ/ইবনুর