বাঁশখালী উপজেলায় পাহাড়ের ভেতরে ধানি জমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোতে গত নভেম্বর হতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে হাজার হাজার মন বনের কাঠ। পাহাড়ের অংশ কেটে এবং ধানি জমির টপসয়েল (উপরি-অংশের মাটি) দিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করলেও কাঠ পোড়ানো, পাহাড় কাটা ও ধানি জমির মাটি ব্যবহার করার জন্য আর্থিক জরিমানা দিয়ে পার পাওয়ার কারণে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মালিকেরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন স্থায়ীভাবে ইটভাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় থামছে না পরিবেশের ক্ষতি করে চলমান ইটভাটার কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা যায়, বনের গাছের গুঁড়ি ও কাঠ পোড়ানো হচ্ছে ইট তৈরিতে। কৃষিজমি ও পাহাড়ের লাল, কালো মাটি দিয়ে দিনভর শ্রমিকরা ইট তৈরির কাজ করছে। এসব ইটভাটার কোন লাইসেন্স নেই। অনিয়মের উপর ভর করে চলছে এসব ইটভাটার কার্যক্রম। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে আইন এবং জেলসহ নির্দিষ্ট শাস্তি নির্ধারণ করা থাকলেও আইনের প্রয়োগ খুব একটা নেই। এজন্য ইটভাটার মালিকরা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে।
জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলায় ১২টি ইটভাটার মধ্যে সরকারিভাবে নিয়ম-নীতিতে ১১টিই অবৈধ। সরল ইউনিয়নের ইটভাটার মালিকের লাইসেন্স থাকলেও কাঠ পোড়ানো ও কৃষিজমির মাটি না ব্যবহার করার শর্তসমূহ না মেনে ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। উপজেলার সাধনপুর লটমনিতে ৪টি, বাহারছড়ার ইলশা ও রত্নপুর এলাকায় ৫টি, সরল, চাম্বল, শেখেরখীল ও পুকুরিয়া ইউপিতে একটি করে ১২টি ইটভাটা রয়েছে। তার মধ্যে বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমাসহ নানান জটিলতার কারণে ৩টি বন্ধ থাকলেও বাকি ৯টি ইটভাটা চালু রয়েছে বর্তমানে। এসব ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য প্রায় হাজার মন কাঠ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হয়।
প্রশাসনের দাবি, তারা প্রত্যেকটি ইটভাটায় নোটিশ দিয়েছেন ইটভাটা বন্ধ রাখার জন্য। তবে কে শোনে কার কথা। বাহারছড়া, চাম্বল, সরল, সাধনপুর ও পুকুরিয়ায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে পাহাড়ের ভেতরে, লোকালয়ে ও ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ে উঠেছে।
জলদী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, ইটভাটাগুলোতে পাহাড় কাটা ও কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণভাবে নিষেধ রয়েছে। যে সমস্ত ইটভাটা পরিবেশবান্ধব নিয়ম না মেনে পাহাড়ি মাটি বা কাঠ ব্যবহার করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অবৈধ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে অভিযোগে ইটভাটা বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে রিট করেছে কয়েকজন মালিক। কয়েকবার অভিযান হয়েছে, আবারো অভিযান হবে।
পূর্বকোণ/ইব