চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফটিকছড়ির আলুচাষিদের দুঃখ ‘হিমাগার নেই’

এস.এম মোরশেদ মুন্না, নাজিরহাট

২০ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

ফটিকছড়ি উপজেলায় বাড়ছে আলুর আবাদ। একটি হিমাগারের অভাবে ন্যায্য দামের দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকরা। আলুর দামের বর্তমান ঊর্ধ্বগতি দেখে ফটিকছড়িতে আলু চাষে আরো বেশি আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। কৃষকদের মতে, আলুর উৎপাদন মৌসুমে আলুর দাম থাকে না। যা যেকোন শস্যের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। হিমাগার থাকলে উৎপাদিত আলু সংরক্ষণে রেখে পরবর্তীতে অসময়ে বিক্রি করে লাভবান হতো চাষিরা।

 

ফটিকছড়ি দেশের অন্যতম একটি বড় উপজেলা, যেখানে ২৮হাজার ১শত ৮৭ হেক্টর চাষযোগ্য কৃষি জমি রয়েছে। এতদঅঞ্চলের মাটি সবজি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সার্বিক বিবেচনায় উপজেলাতে একটি হিমাগার খুবই প্রয়োজন। এতে করে ফটিকছড়িতে আলুর উৎপাদন বহুগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা জাতীয় পর্যায়ে আলুর দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসাবে কাজ করবে। সমগ্র চট্টগ্রামে সমবায় এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন হাটহাজারী, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ ও সাতকানীয়া উপজেলা মিলে মাত্র ৪টি হিমাগার রয়েছে।

 

সূত্রমতে, ফটিকছড়িতে আনুমানিক আড়াই হাজার আলু চাষি রয়েছেন। চলতি বছর ফটিকছড়ি উপজেলাতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩শত ৮২ হেক্টর জমি। হিমাগারের ব্যবস্থা থাকলে এই পরিসংখ্যান অনেকগুণ বাড়ত। গতবছর আলুর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩শত ৭০ হেক্টর জমি, অর্জিত হয়েছিলে ৩শত ৮০ হেক্টর। পরিসংখ্যানে দেখা যায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি। অর্থাৎ আলু চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। এদিকে বছরের পর বছর ফটিকছড়ির আলু চাষিরা পার্শ্ববর্তী হাটহাজারী উপজেলাতে অবস্থিত সমবায় হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করছেন। এতে তাদের অতিরিক্ত যাতায়ত খরচসহ বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হয়।

 

জানা গেছে, ফটিকছড়ির চাষিরা হিমাগারে শুধু বীজের আলুই সংরক্ষণে রাখছেন, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়। উপজেলার আলু চাষিদের মতে, ফটিকছড়িতে হিমাগার থাকলে অবশ্যই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে আলু চাষাবাদ হতো এবং বীজের পাশাপাশি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আলু সংরক্ষণ করা হতো।

 

রোসাংগিরী ইউনিয়নের ক্ষুদ্র আলো চাষি মুহাম্মদ আজম জানান, আমি অল্প সংখ্যক জমিতে আলু চাষ করে হাটহাজারী সমবায় হিমাগারে বীজের আলু সংরক্ষণ করেছি। ফটিকছড়িতে হিমাগার খুবই প্রয়োজন। হিমাগার থাকলে আমি আলু চাষে আরো বেশি বিনিয়োগ করতাম। আমার মতো এই চাষে অনেকেই এগিয়ে আসত।

 

নারায়ণহাটের কবীর উদ্দিন জানান, আলুতো এখন সোনার হরিণ। সংরক্ষণের অভাবে আলুর আশাতীত ফলন করেও লাভের মুখ দেখছি না। ফটিকছড়িতে পাম্প (হিমাগার) থাকলে আলু চাষিরা লাভবান হবে, আলু চাষে আগ্রহী হবে।

 

ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, সবজির জন্য ফটিকছড়ির মাটি খুবই উর্বর। আমার জেলা রংপুরে প্রতি ৫কি.মি মধ্যে একটি করে হিমাগার আছে। বুঝলাম না এখানে হিমাগার দিতে কেন এতো অনাগ্রহ। ফটিকছড়িতে শুধু হিমাগার নয়, কৃষি পণ্য প্রসেসিং, মূল্য সংযোজন এবং রপ্তানির ছোট ছোট খাত তৈরি হওয়া দরকার।

 

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ফটিকছড়িতে অবশ্যই একটি হিমাগার দরকার। এতে কৃষিকাজে মানুষের আগ্রহ বাড়বে, পতিত জমির পরিমাণ হ্রাস পাবে। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সামনে অগ্রসর হবেন বলে জানিয়েছেন।

 

চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহারিয়ার আকুঞ্জি জানান, সরকারিভাবে কোন হিমাগার হয় না। চট্টগ্রামে যে ক’টি আছে সবগুলোই সমবায় এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন। আলুর দাম বাড়ার কারণে আলু চাষে আগ্রহ বেড়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট