চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

কেঁদে কেঁদেই বাবা-মায়ের পঁচিশটি নির্ঘুম রাত পার

রবিউল আলম ছোটন, পটিয়া

১০ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ছবির এ্যালবামের পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে মেয়ের ছবি খুঁজছিলেন মা। আর মেয়ের ছবি দেখতে দেখতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছেন মা জোৎস্না বেগম। তার কান্নার শব্দে কেঁদে উঠছেন বাবা মনির আহাম্মদও। এভাবে এক-দুই দিন নয়, ‘কেঁদে কেঁদেই পঁচিশটি নির্ঘুম রাত পার করেছেন তারা। কারণ তাদের আদরের মেয়ে শাহনাজ কামরুন নাহার (মহুয়া) ছবির মতোই এখন শুধু মাত্র স্মৃতি।

 

শাহনাজ কামরুন নাহার পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মনির আহাম্মদের মেয়ে। ২০১৮ সালে একই উপজেলার বুধপুরা বেলখাইন এলাকার মো. রফিকুল আলম চৌধুরীর ছেলে আল ফায়াদ চৌধুরীর সাথে তার পরিচয় হয়। দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেমের পর ঘটে পরিণয়। ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের আসরে বসে তারা দু’জন। কিন্তু বিয়ের বছর না পেরুতেই শাহনাজ কামরুন নাহারের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই মধুর জীবন পরিণত হয় বিষাদে।

 

গেল ১৬ অক্টোবর ভোররাতে চট্টগ্রাম নগরের বাসায় নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা শাহনাজ কামরুন নাহার আত্মহত্যা করেছে দাবি করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ রেখে পালিয়ে যান। যার কারণে তার গর্ভের অনাগত সন্তানও পৃথিবীর আলোর মুখ দেখতে পারেনি। এ ঘটনায় স্বামী ফায়াদ চৌধুরীসহ শ্বশুরবাড়ির সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শাহনাজ কামরুন নাহারের ভাই শাহ নেওয়াজ। এ ঘটনায় মামলার আসামি নিহত কামরুন নাহারের স্বামীর দুই বোন তসলিমা আফরোজ, নাজিফা সালসাবিন ও ভগ্নিপতি মো. লোকমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে মূল আসামি স্বামী ও শাশুড়িকে এখনো পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

 

গতকাল শনিবার নিজের বাসায় বসে নিহতের মা জোৎস্না বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের গর্ভের অনাগত সন্তানকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল তার। নিজের গর্ভে অনাগত সন্তান রেখে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতেই পারে না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। সামান্য বিষয় নিয়ে তারা সবসময় তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। ওই দিনও আমার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে হত্যা করে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এই হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই’।

 

এদিকে মেয়েকে হারানোর অসহ্য মানসিক যন্ত্রনায় মেয়ের মৃত্যুর পরদিনই ব্রেইন স্ট্রোক করেন মনির আহাম্মদ। গেল ২৩ অক্টোবর নগরের মেডিকেল সেন্টার হসপিটালে অপারেশন হয় তার। তবে তিনি এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। ঠিকমত কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না, কিন্তু মেয়েকে যে আর ফিরে পাবেন না সেটা চিন্তা করতেই হু হু করে কেঁদে উঠছেন। মেয়েকে হত্যার বিচার চাইছেন প্রশাসনের কাছে।

 

শাহনাজ কামরুন নাহারের ভাই শাহ নেওয়াজ বলেন, প্রেমের সম্পর্কের বিয়ে হওয়ার কারণে আমার বোন বেশিরভাগ সময় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের কথা গোপন রাখতেন। কিন্তু স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের আচরণে বুঝা যেত আমার বোন শান্তিতে নেই। বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছেন, আমার বোন আত্মহত্যা করেছে। যদি বোন আত্মহত্যাই করবে, তাহলে বাড়ির সবাই হাসপাতালে মরদেহ রেখে পালাল কেন?

 

পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. সোলায়মান পূর্বকোণকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যার ঘটনা। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত এটি হত্যা না আত্মহত্যার ঘটনা তা বলা যাচ্ছে না। ওসি বলেন, স্বামীর বোনেরা তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করত তার বিভিন্ন প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট