খুব ধীরে বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ। মনে করিয়ে দিচ্ছে, ২০১৯, ২০২০, ২০২১ সালের সেই অস্থির সময়ের কথা। এক নতুন ভাইরাসের আগমনে উথাল পাথাল পৃথিবী। চারিদিকে মৃত্যুর ভয়াবহতা। একটুখানি অক্সিজেন এর জন্য কি হাহাকার। আমি তখন জেনারেল হাসপাতালে কভিড এর ফোকাল পারসন। একদল দুঃসাহসী ডাক্তার, নার্স আর এসিস্ট্যান্ট দের সাথে নিয়ে এক অসম লড়াইয়ে লড়ছি। নিজের জন্য ভয়, পরিবার এর জন্য ভয়, সবকিছু কে জয় করে এগিয়ে গিয়েছি। একসময় অজানা শত্রুকে চিনতে শুরু করেছি, আর বিপরীতে চিকিৎসা ও আস্তে আস্তে আয়ত্ত করেছি। একটা সময়ে এসে অসম লড়াইয়ে আমরা জিতেছি। কভিড এর টীকা ও সবাইকে দেয়া হয়েছে। আমরা কিছু টা নিশ্চিন্ত ছিলাম, এ ভয়াবহতা আর হয়ত দেখবনা। কিন্তু, নতুন একটা ভ্যারিয়েন্ট কিছু টা আতংক ছড়াচ্ছে, আমি বলব এখনো আতংকিত হওয়ার মত কিছু ঘটেনি, তবে আমাদের অবশ্যই সাবধান হতে হবে। অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ২০২১ সালেই বতসোয়ানা তে প্রথম ডিটেক্ট হয় ও পরবর্তী সময়ে সারা পৃথিবী তে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কোথাও মহামারি আকারে দেখা যায়নি। আসুন, দেখে নেই এর বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি? প্রথমত এটার গ্রোথ এডভান্টেজ আছে, অর্থাৎ দ্রুত ছড়াতে পারে। কিন্তু এটা ভয়ঙ্কর কিনা তা কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়া ও আউটকাম দেখে বলা যাবে। গবেষক রা এখন পর্যন্ত এটার সিভিয়ারিটি খুঁজে পায়নি। তবে ভ্যাক্সিন আবিস্কারক রা জানিয়েছেন, প্রচলিত কভিড ভ্যাক্সিন এটার বিরুদ্ধে কম কাজ করছে, কিন্তু হসপিটাল এডমিশন বা সিভিয়ারিটি হবে না এটা নিশ্চিত করেছেন। এখন আসি কি কি লক্ষ্মণ হতে পারে। জ্বর বা কাশি নাও থাকতে পারে, আবার থাকবেই না এমন কোন কথা নেই, এছাড়া মাথাব্যথা, বিভিন্ন জয়েন্ট এ ব্যাথা, রাতে ঘাম হওয়া, খুব দ্রুত এপিটাইট কমে যাওয়া। নিউমোনিয়া প্রধান লক্ষ্মণ ও ARDS (একিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম) হয়ে মৃত্যুর কারণ ঘটায়। কভিড ডিটেকশনের জন্য নতুন প্রাইমার দিয়ে পিসিআর টেস্ট করতে হবে, যাতে সব জেনোম ডিটেক্ট করা যায়। সন্দেহ হলে প্রথমেই একটা চেস্ট এক্সরে করে নিতে হবে, নিউমোনিয়া আছে কিনা? ভাইরাল নিউমোনিয়ার ফিচার পাওয়া যাবে, তবে গবেষকরা বলছেন এই ভ্যারিয়েন্ট ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করতে পারেনা। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর। কি কি করতে হবে? আশা করি সবার মুখস্থ আছে। ভালো মানের মাস্ক ব্যাবহার করতে হবে, নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। তিন ফুট দুরত্ব ও জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে। লক্ষ্মণ দেখা দিলে চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে। আতংকিত না হয়ে সচেতন হউন। যারা টিকা নিয়েছেন কিছু না কিছু প্রটেকশন পাবেন, তবে ইতিমধ্যে যাদের ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে তারা সাবধান থাকবেন। পরিবার এর বয়স্ক মানুষের যত্ন নিবেন। আশা করছি, আল্লাহর রহমতে আমরা সবাই একসাথে কাজ করলে, নতুন কোভিডের বিরুদ্ধে আমরা জয়ী হব। পৃথিবী নামক এই গ্রহের মানুষ থমকে যেতে পারে কিন্তু কখনো হেরে যায় না। ভালো থাকবেন সবাই।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
পূর্বকোণ/এএইচ