চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

বাংলাদেশ হয়ে সেভেন সিস্টার্সে যাওয়ার রেলপ্রকল্প স্থগিত করল ভারত
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ হয়ে সেভেন সিস্টার্সে যাওয়ার রেলপ্রকল্প স্থগিত করল ভারত

অনলাইন ডেস্ক

২০ এপ্রিল, ২০২৫ | ১১:৫১ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে রেলওয়ের সংযোগ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন ও নির্মাণ কাজ স্থগিত করেছে ভারত। ‘শ্রমিকদের নিরাপত্তা’ও ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার’কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’ আজ রোববার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে।

 

‘দ্য হিন্দু’ জানিয়েছে, তিনটি চলমান প্রকল্পের কাজ এবং পাঁচটি আলাদা জায়গায় জরিপের কাজ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের রেলপথের মাধ্যমে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে (সেভেন সিস্টার্স) যুক্ত করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে।

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিজেদের রেল নেটওয়ার্ক তৈরির বদলে এখন নয়াদিল্লি এই অর্থ দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রেলপথ অবকাঠামোকে উন্নত করার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করার ব্যাপারে ভাবছে দেশটি। এজন্যে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি রুপির সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

 

দ্য হিন্দু জানিয়েছে, এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ছিল সরু শিলিগুঁড়ি করিডরের (চিকেন নেক করিডর) ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমানো। যেটি ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যুক্ত করার একমাত্র পথ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার দ্য হিন্দুকে জানায়, “এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো নির্মাণ বা অন্য উপকরণ আমরা পাঠাচ্ছি না। প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সংযোগ রুটের অর্থায়ন বন্ধ আছে। এসব কাজের প্রথমে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতীয় অংশে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।”

যেসব প্রকল্প স্থগিত

ভারতের সহযোগিতায় নির্মাণাধীন তিনটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ এবং খুলাবুড়া-শাহবাজপুর রেললাইন, খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন ও ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প।

 

আখাউড়া-আগরতলা (ত্রিপুরা) ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ প্রকল্প ভারত সরকারের ৪০০ কোটি রুপি সহায়তায় করা হচ্ছিল। এই রেল সংযোগের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। যার ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন বাংলাদেশে। আর ত্রিপুরায় ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। খুলাবুড়া-শাহজাদপুর রেললাইন এই প্রকল্পের অংশ। এটির লক্ষ্য ছিল নতুন রেললাইন নির্মাণ ও পুরোনো লাইনের মাধ্যমে আসামের সঙ্গে সংযোগ উন্নত করা।

অপরদিকে খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্পের কাজ চলছিল কনসেশনাল লাইন অব ক্রেডিটের মাধ্যমে। এই প্রকল্পের খরচ ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। এটির মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও খুলনার মধ্যে ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছিল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মোংলা বন্দর ব্রডগেজ রেললাইনের আওতায় আসবে। এই বন্দরের একটি টার্মিনাল পরিচালনার অধিকার রয়েছে ভারতের।

 

অপরদিকে ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা আছে। তবে বিলম্বিত এ প্রকল্পের কাজটি গত বছর পর্যন্ত মাত্র ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ১ হাজার ৬০০ কোটি রুপির এ প্রকল্পের কাজটি করা হচ্ছে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সহায়তায়। তবে এক্ষেত্রে অর্থ ছাড়ে কিছু ঝামেলা দেখা গিয়েছিল বলে জানিয়েছে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। আর পাঁচটি আলাদা জায়গায় যে স্থান জরিপের কাজ চলছে সেগুলোর কাজও স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অপর একটি সূত্র।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত তার অভ্যন্তরীণ ও বিকল্প আঞ্চলিক কৌশল পরিবর্তন করেছে। এর অংশ হিসেব ভারত সরকার উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে রেললাইন দ্বিগুণ থেকে চারগুণ করার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। এরমাধ্যমে নিজেদের নির্ভরতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেখানে এখন জরিপ কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের এক কর্মকর্তা।

 

একইসঙ্গে, ভারত ভুটান ও নেপালের মধ্যে রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। যদিও লজিস্টিক্যালি এ রুটগুলো খুবই জটিল হবে। কিন্তু এগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে পারবে ভারত।

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট