চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

একনেকে উঠছে ওয়াসার দুই প্রকল্প, আসবে বড় পরিবর্তন
চট্টগ্রামের হালিশহরে নির্মাণাধীন ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান

একনেকে উঠছে ওয়াসার দুই প্রকল্প, আসবে বড় পরিবর্তন

মোহাম্মদ আলী

২০ এপ্রিল, ২০২৫ | ১:৩০ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার বড় দুই প্রকল্প অনুমোদনের জন্য একনেকে উঠছে। আজ ২০ এপ্রিল একনেকের সভায় প্রকল্প দুটি অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্প দুটি হচ্ছে-চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ (পয়োনিষ্কাশন) প্রথম প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি প্রকল্প। এর মধ্যে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৯২১ কোটি টাকা।

 

ওয়াসা সূত্র জানায়, নগরে আরো ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা। একইসঙ্গে অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। অপচয়রোধ, নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে তিন হাজার ২৬৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৫৭৮ কোটি এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা করবে ৭৪ কোটি টাকা।

 

ওয়াসা সূত্র জানায়, পানির সরবরাহ ব্যবস্থাপনার পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি হাইড্রোলিক জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। জোনসমূহের মধ্যে একটি জোন ‘কর্ণফুলী সার্ভিস এরিয়া (কেএসএ)’ যা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। ‘কর্ণফুলী সার্ভিস এরিয়ায় (কেএসএ)’ জাইকা এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-২ প্রকল্পের আওতায় নগরে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার (সর্বনিম্ন ৪ ইঞ্চি থেকে সর্বোচ্চ ৪৪ ইঞ্চি) পাইপলাইন প্রতিস্থাপন এবং ডিস্ট্রিক মিটারিং এরিয়া (ডিএমএ) ব্যবস্থা চালু করা হয়। তাতে এই এলাকায় প্রায় ৪৬ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্নভাবে সুষম চাপে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ওয়াসার ১০ শতাংশ সিস্টেম লস কমেছে।

 

কেএসএ জোন ব্যতীত বাকি পাঁচটি সেক্টর পতেঙ্গা, খুলশী, এ কে খান, বায়েজিদ, অক্সিজেন, কালুরঘাট, চাক্তাই প্রভৃতি এলাকার পুরাতন জরাজীর্ণ পাইপলাইন, লিকেজ, ম্যানুয়াল মিটারিং ব্যবস্থা, অবৈধ সংযোগ প্রভৃতি কারণে বিদ্যমান ৪০ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ‘চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন’ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে এসব এলাকায় সিস্টেম লস ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। তাই এসব এলাকাসমূহে সুষম চাপে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং সিস্টেম লস কমিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইন প্রতিস্থাপন, অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। এছাড়া প্রকল্পটির অধীনে নগরের জন্য একটি পানি সরবরাহ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হবে।’

 

জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পের’ মাধ্যমে শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আসবে ওয়াসা। প্রকল্পের মাধ্যমে ম্যানুয়ালি মিটারিং পরিবর্তন করে এক লাখ গ্রাহককে ডিজিটাল মিটারের আওতায় আনা হবে। ওয়াসার আওতাধীন পানি শোধনাগার পাইপলাইনসহ সকল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় জিআই এসবেজড এসেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হবে। হালিশহর এবং নাসিরাবাদ স্টোরের জায়গায় নতুন আধুনিক স্টোর কাম ওয়ার হাউজ নির্মাণ করা হবে।

 

প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ওয়াসার রাজস্ব, আর্থিক ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং পানির উৎপাদন-এসব বিষয় একীভূত করে ওয়াসাকে একটা সিঙ্গেল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা হবে। এতে ওয়াসার পরিচালন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা টেকসইকরণের পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে জবাবদিহিতা।

 

চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ (পয়োনিষ্কাশন) প্রথম প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি :

 

ওয়াসার স্যুয়ারেজ (পয়োনিষ্কাশন) প্রথম প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর। এরপর ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। একই বছরের নভেম্বরে প্রকল্পের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এ কমিটি কাজ শুরুর পর দেখা দেয় ২০২০ সালে বৈশ্বিক করোনার প্রাদুর্ভাব। তাতে বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞগণ নিজ দেশে আটকা পড়েন। তাতে যথাসময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। এ কারণে অনেকটা বিলম্বে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

 

বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বর্তমানে দুভাগে চলছে প্রকল্পের কাজ। একটি হচ্ছে পাইপলাইন বসানো এবং অপরটি হালিশহরে ট্রিটমেন্ট নির্মাণ। প্রকল্পের অধীনে সবমিলে পয়োপাইপলাইন বসানো হবে ২০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৮২ কিলোমিটার অগভীর পাইপলাইন। এসব পাইপলাইন সর্বনিম্ন ২ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৪ মিটার মাটির গভীরে বসানো হচ্ছে। অপর ২০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ১৪ মিটার মাটির গভীরে। প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে বিভিন্ন সাইজের সবমিলে পাইপলাইন বসানো হয়েছে ৯০ কিলোমিটার। অপরদিকে হালিশহরে প্রকল্প এলাকায় পয়োশোধনাগার, ফিক্যাল স্লাজ ট্রিটমেন্ট (মানুষের মল পরিশোধনাগার) প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজে প্রায় ৬৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।


আরও পড়ুন: হালদা-কর্ণফুলীতে লবণের আগ্রাসন : বৃষ্টির অপেক্ষায় ওয়াসা


সূত্র জানায়, চলতি ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্প শেষ করার মেয়াদ রয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে আরো ৩৫ শতাংশ। তাই প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব সম্বলিত প্রথম সংশোধিত একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। মূলত স্যানিটেশন অবকাঠামোর ডিজাইন টেকসইকরণজনিত ব্যয় বৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে পূর্ত কাজের ও আন্তর্জাতিক বাজারে মালামাল ও যন্ত্রপাতির দর বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয় করার লক্ষ্যে প্রকল্পটির সংশোধনী আনা হয়েছে। এটি অনুমোদনের জন্য আজ ২০ এপ্রিল একনেক সভায় তোলা হচ্ছে।

ওয়াসা সূত্র জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার সংস্থা তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করছে। প্রকল্পের অধীনে ২৮ হাজার গ্রাহককে পয়োসংযোগ প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে ১০ হাজার গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর নগরের ২০ লাখ মানুষ স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে।

 

ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। স্যুয়ারেজের সংশোধিত প্রকল্পের ডিজাইন টেকসইকরণের মাধ্যমে এটির হালিশহরের ১৬৩ একর জায়গায় আরো দুটি স্যুয়ারেজের প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট-৫ (উত্তর কাট্টলী) ও ৬-(পতেঙ্গা) ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট একই জায়গায় নিয়ে আসার সম্ভব হচ্ছে। তাতে ওয়াসার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজতর হওয়া ছাড়াও আলোচ্য দুই প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে না। এতে সাশ্রয় হবে মোটা অংকের টাকা। পাশাপাশি উত্তর কাট্টলী ও পতেঙ্গা এলাকার মানুষ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ওয়াসার স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে। একনেকের অনুমোদন পেলে প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালের জুনে শেষ করা হবে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার এটিই হচ্ছে প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প।

 

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা পূর্বকোণকে বলেন, ২০ এপ্রিল চট্টগ্রাম ওয়াসার দুই প্রকল্প একনেক সভায় ওঠার সম্ভাবনা বেশি। তাতে অনুমোদনের পর প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন শেষে ওয়াসার কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট