চট্টগ্রাম সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

চমেক হাসপাতালে ‘জীবাণুর ডিপো’ শৌচাগার

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

বেসিনের মধ্যে পড়ে আছে নোংরা পানি, আবর্জনা। নেই পানির কলও। শৌচাগারের ভেতরের দৃশ্য আরো ভয়াবহ। টয়েলেটের দরজার বেশিরভাগ ভাঙা। কেউ প্রবেশ করলে বাইরে থেকে দরজার সামনে থাকতে হচ্ছে নিকটতম কাউকে। অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন শৌচাগারের ভেতরে দুর্গন্ধে শ্বাস নেওয়াই দায়। পানি আর রক্তে মাখামাখি মেঝে, হাঁটতে গেলেও পড়ে যায় যায়। অনেকে তো এর দিকে তাকাতেই ঘৃণায় বমি করতে শুরু করেন। এমন চিত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রোগী-স্বজনদের ব্যবহারের জন্য থাকা শৌচাগারগুলোর।

 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর এসব টয়লেট বহু মানুষ ব্যবহার করে থাকেন। যার কারণে সেখান থেকে জনজনান্তিকে নানাবিধ রোগ ছড়াতে পারে। এ কারণে একজন রোগী হাসপাতালে সুস্থ হয়ে গিয়ে বরং জীবাণু বহন করবে। তাই হাসপাতালের শৌচাগার ব্যবস্থাপনায় আরও আধুনিক হওয়ার পরামর্শ তাদের।

 

তথ্য অনুসারে, চমেক হাসপাতালে প্রতিটি ওয়ার্ডে পুরুষের তিনটি, মহিলাদের জন্য তিনটিসহ ৬টি শৌচাগার রয়েছে রোগীদের জন্য। তবে রোগী-স্বজনের তুলনায় মাত্র ৬টি শৌচাগার খুবই অপ্রতুল। এ ছয়টিসহ চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদেরসহ প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৫টি শৌচাগার রয়েছে। সবমিলিয়ে হাসপাতালে প্রায় সাড়ে ৭শ শৌচাগার রয়েছে। অন্যদিকে, এসব শৌচাগার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য সরকারি ও আউটসোর্সিংসহ প্রায় দেড়শ কর্মী কাজ করে থাকেন। যারা তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করেন। তবে শৌচাগারের সংখ্যা অনুযায়ী এসব জনবল খুবই কম বলে জানান দায়িত্বরতরা।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, গাইনি বিভাগের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে, ৩৩ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের শৌচাগারগুলোতে খুবই নাজুক অবস্থা। এসব ওয়ার্ডের টয়লেটের কোনটির দরজা নেই, কোনটির কমোড নষ্ট, আবার কোন কোনটিতে পানির ব্যবস্থা নাজুক। প্রসব হওয়া নারীদের এসব টয়লেট ব্যবহারের উপযুক্তও নয়। সবসময় টাইলসে পানি পড়ে থাকায় স্বাভাবিকভাবে হাটাচলাও কষ্টকর। প্রায় একই দৃশ্য, মেডিসিন বিভাগ, অর্থপেডিক্স বিভাগ, নিউরো সার্জারি বিভাগ, শিশু বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগগুলোরও। এসব নিয়ে রোগী-স্বজনদের অভিযোগ অন্ত নেই।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, প্রায় সাড়ে ৭শ শৌচাগার আছে এ হাসপাতালে। কিন্তু এসব শৌচাগার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যে জনবল প্রয়োজন, তা কিন্তু নেই। সবসময় জনবলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়। পুরো হাসপাতালই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য জনবল খুবই প্রয়োজন।

 

সাম্প্রতিক সময়ে গণপূর্ত বিভাগকে শৌচাগারগুলো পর্যাপ্ত মেরামত করতে চিঠি দেয়া হয়েছে জানিয়ে পরিচালক আরও বলেন, যেসব শৌচাগারের ত্রুটি আছে, তা জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করতে চিঠি দিয়েছি। তবে রোগী-স্বজনদের অনেকেই শৌচাগার ব্যবহারে সচেতন নন। তারাও কমোডে টিস্যুসহ বিভিন্ন জিনিস ফেলে রাখেন। তাদেরও সচেতন হওয়া দরকার।

 

জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যব্যবস্থা হবে একটি দেশের আদর্শ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা। সেটাতেই যদি গলদ থাকে, সেটাতেই যদি হাইজিন মেন্টেইন না হয়, সেখানে যদি বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে একেতো সরকারি স্বাস্থ্য সেবা বলা যায় না। হাসপাতালের প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ শৌচাগার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কিন্তু হাসপাতালেই যদি জীবাণুর উৎস থাকে, তাহলে রোগীরাতো সুস্থ হতে গিয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে। কোন অজুহাতের কথা বলে এ বিষয়ে হেলাফেলা করা উচিত নয়। জনবল না থাকলে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিতে হবে। সারাদিন একজন ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করালেও হবে না। হাসপাতালে প্রতি ২ ঘণ্টা পরপর পরিষ্কার করতে হয়। বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা বিমানবন্দরের মতো শৌচাগারগুলো যদি সব সময় পরিষ্কার রাখতে পারি, তাহলে হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর স্থান কেন পারব না।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট