চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকায় পাঁচ থেকে সাতশ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ফৌজদারহাটে হাসপাতালটি নির্মাণের লক্ষ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প গ্রহণ করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) সম্পন্ন করতে তোড়জোড় শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বৃহত্তর চট্টগ্রামের রোগীদের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেই ভিড় করে থাকেন রোগীরা। যাতে হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়েও কয়েকগুণ চাপ নিতে হয়। এতে করে সাধারণ রোগীদের চাপে অতি জরুরি রোগীদের বেগ পেতে হয়। নানান বিড়ম্বনার শিকারও হতে হয়। বর্তমান অন্তর্বতী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাগণকে চট্টগ্রাম সফরকালে বিষয়টি অবহিত করা হয়। যার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের পক্ষ থেকে ঢাকার উত্তরা, মিরপুর এবং চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট কেন্দ্রিক ৫০০-৭০০ শয্যার তিনটি হাসপাতাল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের স্বাস্থ্য-৫ অধিশাখার উপসচিব শিরিন আখতার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘ঢাকার মিরপুর, উত্তরা ও চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট- এই তিনটি এলাকায় ৫০০-৭০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী এ সংক্রান্ত প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করে সে আলোকে ডিপিপি করে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। পাশাপাশি প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল।
এদিকে, দেরিতে হলেও চট্টগ্রাম শহরের অদূরে নতুন আরেকটি হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগকে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে এটি আলোরমুখ দেখবে না। এতে চট্টগ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালের সমন্বয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন তারা। কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সরেজমিনে জায়গা পরিদর্শনসহ অন্যান্য কার্যক্রম শীঘ্রই শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. অংসুই প্রু মারমা। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করেছি। সকলের সমন্বয়ে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. অংসুই প্রু মারমা বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে মন্ত্রণালয় থেকে ফৌজদারহাটে ৫শ’-৭শ’ শয্যা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। এ নিয়ে সিভিল সার্জন ও বিআইটিআইডি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয়েছে। এখন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হবে। কোথায় হাসপাতালটি করলে ভালো হয়, কীভাবে করলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা যাবে, প্রকৌশলীদের সাথে নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করা হবে। তবে যেহেতু সেখানে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, বিআইটিআইডি হাসপাতাল আছে, বক্ষব্যাধি হাসপাতালও আছে, সবকিছু মাথায় রেখে এগুতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সীতাকুণ্ড-মিরসরাই ও নগরীর হালিশহরসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে একটি হাসপাতাল হওয়া খুবই জরুরি। কেননা সব রোগীদের চাপ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপর। রোগীদেরও যাতায়াতে দুর্ভোগ-কষ্ট হয়। ফৌজদারহাট এলাকায় একটি হাসপাতাল হলে ওই অঞ্চলের রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজ হবে। আমরা চাই দ্রুত হাসপাতালটি যেন বাস্তবে রূপ পায়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) উপ-পরিচালক ডা. ইফতেখার আহম্মদ বলেন, ফৌজদারহাটে ৫শ’ থেকে ৭শ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করা হয়। বলা হয়েছে- এখানে নতুন কোন সরকারি জায়গা আছে কিনা, অথবা অধিগ্রহণকৃত স্বাস্থ্যের কোন জায়গা আছে কিনা, যেখানে হাসপাতালটি গড়ে তোলা যায়। বিষয়টি বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনকেও অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু অধিগ্রহণকৃত কোন জায়গা এখানে নেই। তাই প্রাথমিকভাবে একটি প্রস্তাব হলো বর্তমানে বিআইটিআইডি হাসপাতালটি আরও সম্প্রসারণ করে সেখানে যদি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হয় তাতে হাসপাতালটি করা যায়। তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নও হবে। তা নাহলে নতুন জায়গা খুঁজতে খুঁজতে আরও দেরি হয়ে যাবে। এখানে করলে আশা করা যায় দুই-তিন বছরের মধ্যেই হাসপাতালটি রূপ পাবে।
পূর্বকোণ/ইব