বন্দরনগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলছে না প্রত্যাশা অনুযায়ী গাড়ি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন ৬৬ হাজারের বেশি গাড়ি চলার কথা থাকলেও চলছে সাড়ে ছয় হাজার গাড়ি।
নগরীর লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘শহীদ ওয়াসিম আকরাম’ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে র্যাম্পের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সংযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব র্যাম্পের নির্মাণকাজ শেষ হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবহার বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, এ বছরের মধ্যে র্যাম্পের কাজ শেষ হবে বলে জানান সিডিএ চেয়ারম্যান।
সিডিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে টোল আদায় শুরু করে সিডিএ। এতে মোটরসাইকেল ও ট্রেইলার বাদ দিয়ে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচল করার অনুমতি রয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দৈনিক সাড়ে ছয় হাজার গাড়ি চলাচল করেছে। যেখান থেকে দৈনিক আয় পাঁচ লাখের বেশি।
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গড়ে সোয়া চার লাখ গাড়ি চলাচল করেছে। এই দুই মাসে সেখান থেকে সিডিএ’র আয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। তবে রমজানের শুরু থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল কমেছে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২৫ সালে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন ৬৬ হাজারের বেশি গাড়ি চলবে।
এদিকে, এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবহার বাড়াতে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ২৪টি র্যাম্প নির্মাণ করার কথা ছিল। তবে প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধন করে ৯টি র্যাম্প বাদ দেওয়া হয়। গতবছর সরকার পরিবর্তনের পর আরও ছয়টি র্যাম্প নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ। বাকি নয়টির মধ্যে একমাত্র টাইগারপাসে আমবাগানমুখী র্যাম্পটির কাজ শেষ হলেও এখনও চালু হয়নি। বাকি র্যাম্পগুলোর নির্মাণকাজ চলছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংজ্ঞা একেক দেশে একেক রকম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের তুলনা করলে হবে না। বিশ্বের উন্নত দেশে ২০০ থেকে ৪০০ মাইল দূরত্বে যাওয়ার জন্য এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের এক্সপ্রেসওয়েতে অনেকগুলো মুখ করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আমাদের খরচ অনেক বাড়তো।
তিনি আরও বলেন, টাইগারপাস থেকে পতেঙ্গা বা বিমানবন্দর যাওয়ার মূল সড়ক কিন্তু একটি। এই সড়কের উপর দিয়েই আমাদের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হয়েছে। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে যদি র্যাম্পের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে সংযোগ না দেই তাহলে তো মানুষ এক্সপ্রেসওয়ে উঠবে না। তাই গুরুত্বপূর্ণ জংশনে আমাদের র্যাম্পের পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের সুযোগ পায়।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবহার বাড়াতে এ বছরের মধ্যে র্যাম্পগুলোর কাজ শেষ করে চালুর ব্যবস্থা করবো। এছাড়া যে কয়েকটি র্যাম্প নিয়ে আপত্তি আছে, আমরা আপাতত সেগুলো নির্মাণ করবো না।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। খরচ বেড়েছে ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সংশোধিত প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়।
তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজই শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পরে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
পূর্বকোণ/ইব