শিক্ষক সংকটে ভুগছে নগরী ও উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। অন্যদিকে, শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। শিক্ষকশূন্যতা, দক্ষ শিক্ষকের অভাবসহ নানা সমস্যায় এখনও অনেকটা অবহেলিত প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা। ফলে প্রাথমিকের লেখাপড়ার মান বৃদ্ধির জন্য শূন্য পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরী ও উপজেলায় ২ হাজার ২৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে ৫১৯টি বিদ্যালয়ের পাঠদান। যা মোট বিদ্যালয়ের শতকরা ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এরমধ্যে উপজেলার ৩০৪টি ও নগরীর ২১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও চলতি দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরাই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এরমধ্যে শুধু ফটিকছড়ি উপজেলাতেই প্রধান শিক্ষকের শতাধিক পদ খালি রয়েছে।
নিয়মিত প্রধান শিক্ষক না থাকায় অনেক দাপ্তরিক কাজে জটিলতা তৈরির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা ও পাঠদানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতিষ্ঠান প্রধান ছাড়া শিক্ষা কার্যক্রম চালানো কষ্টসাধ্য। বর্তমানে অনেকগুলো বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত ও চলতি দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও রয়েছে শিক্ষার্থীর অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব। তবে শিক্ষক সংকটের সংখ্যা শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। গ্রামের দূরবর্তী এবং উপকূল অঞ্চলে শিক্ষকরা থাকতে চান না বলেই এ সংকট দেখা দেয়।
জেলার মধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এসব পদে নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। শূন্য পদে প্রধান শিক্ষক পদায়ন হবে পদোন্নতি ও সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে। পদোন্নতির মাধ্যমেই বেশি নিয়োগ হবে জানা যায়।
লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাদ ইকবাল পারভেজ বলেন, একটি বিদ্যালয়ে যদি প্রধান শিক্ষক না থাকে, ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় একদিকে শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষক যেভাবে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে ভারপ্রাপ্তরা বিভিন্ন কারণে অনেক সময় সেভাবে কাজ করতে পারেন না।
দেশে প্রায় ২৮ হাজার সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে। এই পদোন্নতির কার্যক্রম প্রায় শেষ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। এরমধ্যে পদোন্নতি-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। সারাদেশের কিছু কিছু জেলায় পদোন্নতির আদেশ জারি হলেও এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রামে একটিও হয়নি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত বণিক বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকা বিদ্যালয়গুলোর তালিকা ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া, পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টাও আমরা দেখছি। এসব শিক্ষকের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। যাচাই-বাছাইয়ের পরে গেজেট প্রকাশ হবে। পরে ধাপে ধাপে বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
পূর্বকোণ/পিআর