দেড় দশক আগেও চট্টগ্রামে রক্তরোগের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার কথা চিন্তা করা ছিল দুষ্কর। বেসরকারি তো দূরের কথা, সরকারি কোন হাসপাতালেই ছিল না এ রোগের পূর্ণাঙ্গ সেবা কার্যক্রম। তবে সে চিত্র পাল্টেছে। ২০০৮ সালে একমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে রক্তরোগের চিকিৎসা সেবা মিলছে হাতের নাগালে।
আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ নানান সংকট আর সীমাবদ্ধতার মাঝেও সফলতার কমতি নেই চমেক হাসপাতালের হোমাটোলজি (রক্ত ও রক্তরোগ) বিভাগের। বিগত কয়েক বছরে বড় সাফল্যের জায়গা হয়েছে রক্তরোগ চিকিৎসায়। রক্তের ক্যান্সারের পাশাপাশি হিমোফিলিয়া, থ্রোম্বোসিস, থেলাসেমিয়ার মতো জটিল রক্তরোগের চিকিৎসা মিলছে চমেক হাসপাতালে। যা সেবাদানে সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। ফলে চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভাগের বাকি ১০ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জটিল ও দুরারোগ্য নানান সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা ছুটে আসছেন বৃহৎ সরকারি এ হাসপাতালে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারিভাবে ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে চমেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগ। যদিও ওই সময়ে বিভাগটিতে ছিল না কোন জনবল কিংবা পৃথক ওয়ার্ডও। যার কারণে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সঙ্গেই কাজ করতে হতো। কিন্তু তাতেও ছিল নানান সীমাবদ্ধতা। এরমধ্যে ২০১২ সালে তৎকালীন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. গোফরানুল হক এবং হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফরিদ উদ্দিন আহমদে পৃথক কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ওই সময়ে মেডিসিন বিভাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র ৩টি শয্যা দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকেই পৃথক কার্যক্রম শুরু করে রক্তরোগ বিভাগ। বর্তমানে হাসপাতালের নতুন ভবনের ৬ তলায় পৃথক রক্তরোগ বিভাগের ১৬ শয্যার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সেবা দেওয়া হচ্ছে রক্তরোগের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও। মিলছে রক্তের ক্যান্সারসহ রক্তরোগের জটিল সেবাও।
রক্তরোগ সংশ্লিষ্টরা জানান, চমেক হাসপাতালের রক্তরোগ বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে অন্তত ৩০ জন রক্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী দীর্ঘ বছর ধরে সুস্থ জীবন যাপন করে যাচ্ছেন। যারা অন্যদের মতো স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের কাজ করছেন। শুধু তাই নয়, হিমোফিলিয়া, থেলাসেমিয়া রোগীদেরও সফল চিকিৎসা হচ্ছে এখানে। গেল বছরে প্রায় ৯ হাজার রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া বাকি সকল চিকিৎসা মিলছে। তবে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ অবকঠামো সুযোগ সুবিধা তৈরি হলে শতভাগ চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হবে বলে মত চিকিৎসকদের।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হেমাটোলজি (রক্ত ও রক্তরোগ) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানী পূর্বকোণকে বলেন, ‘২০০৮ সালে স্বতন্ত্র বিভাগ চালু হলেও কার্যক্রম ছিল না। প্রথম দিকে মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে পরবর্তীতে প্যাথলজি বিভাগের সাথে কাজ করতে হয়েছিল। যার কারণে প্রথমদিকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা ছিল কষ্টের। তবে ধীরে ধীরে এখন অনেক সফলতা এসেছে। রক্ত ক্যান্সারের চিকিৎসা থেকে শুরু করে রক্তরোগের জটিল চিকিৎসাও সফলতার সাথে প্রদান করা হচ্ছে। শুধুমাত্র বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া রক্তরোগের অন্যান্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে গুরুত্ব বাড়ায় ২০২২ সাল থেকে চিকিৎসকদের এমডি কোর্সও চালু হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০ জন রক্ত ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ জীবন যাপন করছেন। তবে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের সুবিধা যদি চালু করা যায়, তাহলে শতভাগ চিকিৎসা মিলবে চট্টগ্রামেই। রোগীদের আর ঢাকা কিংবা দেশের বাইরে ছুটতে হবে না।’
পূর্বকোণ/পিআর