চট্টগ্রাম সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

সন্তান নিয়ে আতঙ্কে অভিভাবকরা

নগরীর স্কুলগুলোতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ব্যবস্থা ‘নাজুক’

ইমরান বিন ছবুর

২৮ জুলাই, ২০২৩ | ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গুরোগী শনাক্তে একের পর এক রেকর্ড হলেও নগরীর স্কুলগুলোতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। বেশিরভাগ স্কুল প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। আঙিনা ও ভবনের চারপাশে জমে আছে পানি। শ্রেণিকক্ষগুলোতেও নিয়মিত মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে না। এসব কারণে সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর পর ডেঙ্গু আতঙ্কে দিন কাটছে অভিভাবকদের। স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যাও কমে গেছে। গত কয়েকদিনে নগরীর বিভিন্ন স্কুল ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

 

নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন কোরবানীগঞ্জ এলাকায় এক ভবনেই পাঠদান চলে বলুয়ারদীঘি সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লামাবাজার আছদ আলী সওদাগর সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়, বলুয়ারদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লামাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কায়সার-নিলুফার কলেজের। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ মিলিয়ে এ ভবনের পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর একাডেমিক কার্যক্রম চলছে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ছয়তলা ভবনটির পার্কিংয়ের জায়গায় সারা বছর পানি জমে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা এ পানিতে রয়েছে তীব্র দুর্গন্ধ। তবুও পানি সরাতে কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

 

অভিভাবকদের অভিযোগ, পার্কিংয়ের জায়গাটি এডিস মশার কারখানা হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হলেও পার্কিং এলাকা পরিষ্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

 

জানতে চাইলে বলুয়ারদীঘি সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, একটি বিদ্যালয়ের ভবনের পরিবেশ এমন থাকে? ভবনের চারপাশে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। ভবনের পার্কিংয়ের জায়গায় পানি জমে রয়েছে কতদিন ধরে। যে কেউ পার্কিংয়ের জায়গা দেখলে বলবে তা মশার উৎপাদনস্থল। এসব দেখার কেউ নেই। সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে আমরা এখন ডেঙ্গু আতঙ্কে থাকি।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লামাবাজার আছদ আলী সওদাগর সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই পার্কিংয়ের জায়গায় পানি রয়েছে। তা নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। পার্কিং থেকে পানি অপসারণ করে সেখানে পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। আশা করছি এমন অবস্থা আর থাকবে না।

 

শুধু কোরবানীগঞ্জ এলাকার পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, একই দৃশ্য দেখা গেছে নগরীর নিউমার্কেট এলাকার মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে। ভবন নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় পাশের কৃষ্ণ কুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমও চলে এ স্কুল ক্যাম্পাসে। সরেজমিন ঘুরে মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ভবনের চারপাশ ও মাঠের কোণায় আবর্জনা-পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। স্কুলের এমন পরিবেশ নিয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিভাকরা।

 

ডেঙ্গু প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহেদুল কবির চৌধুরী জানান, গত মঙ্গলবার সিটি কর্পোরেশনের লোকজন স্কুলে ফগার মেশিন (মশা মারার যন্ত্র) নিয়ে যান। তবে কিছুক্ষণ পরই মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুরো ক্যাম্পাসে মশার ওষুধ দিতে পারেননি তারা।

 

১৯ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ডের চর চাকতাই সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালর ভবনের পাশে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় সেখানেও পানি ও আবর্জনা জমে থাকতে দেখা গেছে। জমে থাকা আবর্জনা ও পানিতে বাসা বেঁধেছে মশা ও পোকামাকড়।

 

অভিভাবকরা জানান, সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে সারাদিন বাসায় আতঙ্কের মধ্যে থাকেন তারা। স্কুলের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।

 

চট্টগ্রাম অভিভাবক ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, স্কুল ছুটির পর লাইট বন্ধ থাকায় শ্রেণিকক্ষগুলোতে মশার উৎপাত বেশি থাকে। তাই প্রতিদিন ক্লাস শুরুর আগে শ্রেণিকক্ষে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা প্রয়োজন। স্কুলের চারপাশ পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এসব প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা এসব বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে মেয়র ও জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেবো।

 

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট