চট্টগ্রাম বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

ইয়াবা পাচারের রুট ও মাধ্যম বাড়ছে
ফাইল ছবি

ইয়াবা পাচারের রুট ও মাধ্যম বাড়ছে

নাজিম মুহাম্মদ

১৬ মে, ২০২৫ | ১২:১৫ অপরাহ্ণ

মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে ইয়াবা। ইয়াবা পাচার ঠেকাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও সেগুলো খুব একটা সফলতার মুখ দেখছে না। বরং ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়ছে নানা শ্রেণি ও পেশার নারী-পুরুষ।

 

ফলে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো এখন ইয়াবার ঘাঁটি হিসেবে পরিণত হয়েছে। এরপর সড়ক ও নদীপথে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকারের গবেষণায় উঠে এসেছে ইয়াবা পাচারের নানা মাধ্যমের এসব তথ্য।

 

ইয়াবা পাচারের যত মাধ্যম: যে সব মাধ্যমে ইয়াবা পাচার হচ্ছে তা হলো- বাসের গিয়ার বক্স, বাসের ইঞ্জিনসহ বডিতে বিশেষ চেম্বার তৈরি করে এবং মোটরসাইকেলের ভিতর। মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত মরিচ, চাল, ডাল, শুটকি, পেয়াজ, বাঁশ, কাঠ ইত্যাদির মাধ্যমে ইয়াবার চালান ট্রাকে পাচার, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা নৌকার সঙ্গে ইয়াবার বড় প্যাকেট পানি নিরোধক করে নদীর মধ্যে ফেলে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা এবং পরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসার পর সুযোগ বুঝে তুলে নেয়া।

 

গ্যাসের সিলিন্ডার, টিভি, ফ্রিজ, সাপুড়ের বক্স, কাঠের চেয়ার, টেবিল, পেয়াজ বা ফলের মধ্যে গর্ত করে, মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগে, মানিব্যাগে ইয়াবা পাচার। কাঠের গুঁড়ির মধ্যে গর্ত করে ইয়াবা ঢুকিয়ে গর্তগুলো কাঠ বা মোম দিয়ে বন্ধ করা হয়। কাঠের লগে চিহ্ন দেয়া হয়। পেটে, পায়ু পথে, যৌনাঙ্গে, শরীরের মধ্যে স্কচটেপ দিয়ে আটকে ইয়াবা পাচার। টিফিন ক্যারিয়ার, পানের খাঁচা, জুতা, টর্চ লাইট, ঔষধের প্যাকেট। পান বোঝাই ট্রাক, চান্দের গাড়ির মালামালের সাথেও ইয়াবা নিয়ে যাওয়া হয়। অনেকে পর্যটক সেজে ব্যক্তিগত গাড়িতে এমনকি ট্রেন, বিমানে ও নৌকায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ইয়াবা পাচার করা হয়।

 

মাদক পাচারে যারা জড়িত: কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মাদক পাচারকারী ও মাদক ব্যবসায়ী, গাড়ি চালক, গাড়ির হেলপার, সুপারভাইজার, রোহিঙ্গা নারী পুরুষ, ভাসমান নারী পুরুষ, ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত লোকজন, মাঝি, ইমাম, ভান্তে, সাপুড়ে, শ্রমিক, জনপ্রতিনিধি, বিমান, রেলের কর্মচারী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, এনজিও কর্মী, উকিল, ব্যবসায়ী, ভাড়াটে নারী পুরুষ, সাংবাদিক, পরিবহন শ্রমিক ও সংঘবদ্ধ চক্র মাদক সরবরাহ করে থাকে।

 

ইয়াবা পাচার হয় যেসব রুটে: বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রুটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইয়াবা আনা হয়। নৌ, সড়ক, বিমান এবং রেলসহ ছোটবড় সকল রুট ব্যবহার করা হয়। এসব রুটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, মিয়ানমার থেকে সমতল/পাহাড়ি এলাকা দিয়ে উখিয়া, টেকনাফ হয়ে চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে হ্নীলা, শাহপরীর দ্বীপ, ঘুনধুম, হোয়াইক্যং, মরিচ্যা হয়ে কক্সবাজার।

 

টেকনাফ থেকে পর্যটন রোড হয়ে হাবিব ছড়া, শ্যামলাপুর, মেরিন ড্রাইভ ধরে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা। কক্সবাজার থেকে সাতকানিয়ার কেরানীহাট-বান্দরবান সদর রাজস্থলী (রাঙামাটি) কাপ্তাই লিচুবাগান হয়ে চট্টগ্রাম। রাঙামাটি সদর হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি সদর-রামগড়-বারৈয়ারহাট হয়ে ঢাকা। টেকনাফ থেকে জেলে নৌকায় করে সরাসরি কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া চ্যানেল, পেকুয়া হয়ে চট্টগ্রাম। আবার চট্টগ্রাম-নোয়াখালী-লক্ষীপুর-চাঁদপুর-ভোলা-পটুয়াখালী হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান। কক্সবাজার থেকে সরাসারি চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা। আকাশ পথে কক্সবাজার থেকে ঢাকা-মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত বিস্তৃত।

 

এছাড়াও যেসব রুটে ইয়াবা পাচার হয় তা হলো, কক্সবাজার-চকরিয়া -বাঁশখালী-আনোয়ারা- কর্ণফুলী টানেল -চট্টগ্রাম মহানগর হয়ে ঢাকা। টেকনাফ থেকে উখিয়া সোমারপাডা মেরিন ড্রাইভ-হিমছড়ি হয়ে কক্সবাজার। সীমান্ত এলাকা থেকে গর্জনীয়া বাজার বাইশারী-ঈদগাহ-চকরিয়া হয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান। চাকঢালা- নাইক্ষংছড়ি-চাকঢালা- লোনাইছড়ি-শিকলঘাট-রামু-চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা। সীমান্তবর্তী দোছড়ি হয়ে লেখুছড়ি-গর্জনীয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে রামু। গর্জনীয়া-বাইশারী-ঈদগাহ-চকরিয়া হয়ে চট্টগ্রাম। সীমান্তের ফুলতলী হয়ে গর্জনীয়া-উখিয়ার ঘোনা গ্রাম-চা বাগান এলাকা-রামু হয়ে চট্টগ্রাম। নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু বাজার সীমান্ত- পোয়ামুহুরী সীমান্ত-আলিকদম-লামা-চকরিয়া হয়ে চট্টগ্রাম। থানচি-বান্দরবান সদর-মুরংপাড়া সীমান্ত-থানচি-বান্দরবান সদর-চন্দ্রঘোনা-রাঙামাটি-ফেনী হয়ে ঢাকা।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট