প্রকাশ্যে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়। ফসলি জমির টপসয়েল এবং খালের বালিও লুট হচ্ছে রাতের আঁধারে। পাহাড়-কৃষিজমি ও খালের এসব বালি-মাটি দিয়ে পুকুর ও অন্য ফসলি জমি ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে বাড়িঘর ও নানা স্থাপনা।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুলিশ, রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা ও কথিত সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাহাড় ও কৃষিজমিখেকো মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কৃষিজমির টপসয়েল ও পাহাড় কাটার অবৈধ সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমিন প্রকাশ মোটা আমিন ও নুরু নামের দুই ব্যাক্তি।
এছাড়া সুমন নামের আরেকজনের নামও উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরাও রয়েছেন। ৭-৮ মাস ধরে প্রতিরাতে স্কেভেটরের মাধ্যমে মাটি কেটে ডাম্প ট্রাক দিয়ে লুট করে নেওয়া হচ্ছে মাটি। প্রতিরাতের জন্য ট্রাকপ্রতি চার হাজার টাকার বিনিময়ে মাটি কাটার অনুমতি মেলে। এর মধ্যে গাড়িপ্রতি পুলিশ-প্রশাসনের নামে তিন হাজার, কথিত সাংবাদিকদের নামে ৫০০ টাকা ও মাটিখেকো চক্রের জন্য ৫০০ টাকা করে ভাগবাটোয়ারা হয়। শুক্রবার এলেই কথিত দুই সাংবাদিকের মাধ্যমে হয় সাপ্তাহিক হিসাব-নিকাশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে লালারখীল পাহাড়ে গেলে চোখে পড়ে পাহাড় কাটার অপেক্ষায় পাহাড়ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি স্কেভেটর। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যা নেমে এলেই শুরু হয় পাহাড় কাটা। চলে ভোর পর্যন্ত। এভাবেই খননযন্ত্রের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ও ক্রমান্বয়ে সাবাড় হচ্ছে পাহাড়টি। ফেরার পথে চোখে পড়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশ ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে আছে আরও একটি স্কেভেটর। মৎস্য প্রজেক্ট খননের নামে রাতের আঁধারে এই কৃষিজমি থেকেও মাটি লুট করে অন্যত্র বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র।
অন্যদিকে, উপজেলার শ্রীমাই খাল থেকে দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালি-মাটি লুট করে আসছে একটি চক্র। গেলো ৬ জানুয়ারি ওই খাল থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের অপরাধে সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্লাবন কুমার বিশ্বাস এক যুবদল নেতাকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং বালি উত্তোলনে ব্যবহৃত তিনটি ট্রাক জব্দ করেন। এরপরও থেমে নেই বালি লুটের মহোৎসব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার হাইদগাঁও সাতগাউছিয়া মাজারের পশ্চিম পাশে, গুচ্ছগ্রামের মা ফাতেমার মাজারের পাশে, হাইদগাঁও আকবর শাহ মাজারের পিছনে হাজী পাড়া, কেলিশহর খিল্লা পাড়া, মাঝির পাড়া, কেলিশহর মডেল টাউনের পাশে, পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড গোলাল সওদাগরের মসজিদের পূর্ব পাশে, রতনপুর, মৈতলা, মৌলভীবাজার, ধলঘাট ক্যাম্প আজাদ ক্লাবের পাশে, পাঁচুরিয়া, বড়লিয়া, ছনহরা মঠপাড়া, খরনা ফকির পাড়া, কাঞ্চননগর, কচুয়াই চা বাগানসহ অন্তত অর্ধশতাধিক পয়েন্টে ৭-৮ মাস ধরে মাটি কাটার মহোৎসব চলে আসছে। আর প্রতিরাতে এসব পয়েন্টে চলে অন্তত শতাধিক গাড়ি, আর হিসাব অনুযায়ী প্রতিরাতেই ৩-৪ লাখ ও প্রতিমাসে চলে প্রায় কোটি টাকার মাটির অবৈধ ব্যবসা রমরমা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানুর রহমান বলেন, আমি এবং এসল্যিান্ড দু’জন; আমরা যতটুকু পারছি অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাটিখেকোরা পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসার বিষয়টি আমার জানা নেই।
পূর্বকোণ/ইবনুর